অস্বস্তি বৃদ্ধি তৃণমূলে

এ বার শাসক দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিধানসভা ভোটে কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন না-দেওয়ার কথা জানাল উত্তরবঙ্গ বন জন শ্রমজীবী মঞ্চ এবং হিমালয়ান ফরেস্ট ভিলেজার্স অর্গানাইজেশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

এ বার শাসক দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিধানসভা ভোটে কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন না-দেওয়ার কথা জানাল উত্তরবঙ্গ বন জন শ্রমজীবী মঞ্চ এবং হিমালয়ান ফরেস্ট ভিলেজার্স অর্গানাইজেশন।

Advertisement

সোমবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে তারা এ কথা জানিয়েছেন। আসন্ন বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় থাকা বনবস্তিগুলির অন্তত ২ লক্ষ বাসিন্দাদের তারা ‘নোটা’-তে ভোট দানের জন্য আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। বনবস্তির বাসিন্দাদের সংগঠনগুলির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, রাজ্যে বনবস্তির বাসিন্দাদের বনাধিকার আইনে সুয়োগসুবিধা দিতে নেতামন্ত্রীদের কেউই সক্রিয় নয়। ২০০৬ সালে বনাধিকার আইন কার্যকর করতে বলা হয়েছে। অথচ দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলায় বনবস্তির বাসিন্দারা সেই অধিকার মেনে জমির এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন না। উল্টে বনবস্তির কোনও জমিতে চাষ আবাদ করতে গেলে বাসিন্দাদের নামে মিথ্যে মামলা করে অবৈধ দখলদার বলে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বঞ্চিত করা হচ্ছে অন্য সুবিধা থেকে। সে কারণে বিধানসভা ভোটে তারা কোনও রাজনৈতিক দলকেই সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছেন।

এক দিন আগেই তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে শাসক দলকে সমর্থন না-করার কথা জানিয়েছেন রূপান্তকামীরা। এবার বনবস্তির বাসিন্দাদের সংগঠনগুলি কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন না-জানানোর সিদ্ধান্তে তাঁদের একটা বড় অংশ শাসক দলের পক্ষ থেকেই সরে আসছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। ফলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভা ক্ষেত্র ডামগ্রাম-ফুলবাড়ি থেকে কুমারগ্রাম, কালচিনি, মাদারিহাট, নাগরাকাটা, আলিপুরদুয়ার, রাজগঞ্জ, ধূপগুড়ি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এলাকাতে শাসক দলের অস্বস্তি বাড়ল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। বনবস্তির বাসিন্দাদের বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে।’’ শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যর দাবি, বাম জমানাতে তারাই বনবস্তির বাসিন্দাদের বনের অধিকার দিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। বর্তমান সরকার কিছু করেনি। বিভিন্ন বনবস্তিগুলিতে তাঁদের শ্রমিক সংগঠনগুলির মাধ্যমে বাসিন্দাদের ভোট দিতে তাঁরা আবেদন জানাবেন।

Advertisement

হিমালয়ান ফরেস্ট ভিলেজার্স অর্গানাইজেশনের কার্শিয়াঙের সম্পাদক রাজকুমার রিজান, উত্তরবঙ্গ বন জন শ্রমজীবী মঞ্চের আহ্বায়ক লাল সিংহ ভূজেল, সুন্দর সিংহ রাভারা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গে ২৫০ টি বনবস্তি রয়েছে। বনাধিকারিক আইন মেনে সেখানকার বনবাসী বাসিন্দাদের জমির অধিকার, বন সম্পদের অধিকার দেওয়ার কথা। কিন্তু বনবস্তিতে বিভিন্ন উন্নন কাজে বন দফতর বাধা দিচ্ছে। বনবস্তিগুলি ‘রেভিনিউ ভিলেজ’-এ পরিবর্তি হওয়ার কাজ শুরু হলেও সিংহভাগ ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। কোনও বৈধ সমীক্ষা ছাড়াই কিছু ক্ষেত্রে পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। যা দেওয়ার নিয়ম নেই। দার্জিলিং জেলাতেই ১৭০ টি বনবস্তি রয়েছে। বনাধিকারি আইন অনুসারে গ্রামসভাই বনবস্তিগুলির উন্নয়নে সক্রিয় হবে। অথচ নেতা, মন্ত্রীরা অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সম্যক ধারণা নেই। বন দফতর সে সব কিছুই মানতে চাইছে না। লালসিংহ ভূজেলের কথায়, ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ক্ষমতায় এলে রাজ্যে এই সমস্যা সমাধান করতে তারা ভূমিকা নেবেন। পরে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগেও আরেক দফায় তৃণমূল, বিজেপি, বাম শরিক বিভিন্ন দলের নেতৃত্বের সঙ্গে তারা কথা বলেছিলেন। কিন্তু কেউই কিছু করেননি বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন