ট্রেন চালুর এক যুগ পরেও হাল ফেরেনি বালুরঘাটের

ট্রেন চালু হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় এক যুগ। জেলা সদর বালুরঘাটকে আদর্শ স্টেশন, মহকুমা শহর গঙ্গারামপুরে উন্নত স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলা-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা করা হলেও কোনও কাজই হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বালুরঘাট স্টেশন থেকে চলার কথা থাকলেও সব ট্রেন চলে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৮
Share:

প্লাটফর্মের শেড হয়নি। এমনকী এখনও রেলের লাইন বদলাতে হয় হ্যান্ড প্ল্যাঞ্জারের (ইনসেটে) সাহায্যে। ছবি: অমিত মোহান্ত

ট্রেন চালু হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় এক যুগ। জেলা সদর বালুরঘাটকে আদর্শ স্টেশন, মহকুমা শহর গঙ্গারামপুরে উন্নত স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলা-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা করা হলেও কোনও কাজই হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

Advertisement

বালুরঘাট স্টেশন থেকে চলার কথা থাকলেও সব ট্রেন চলে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। যেমন কাটিহার থেকে একটি ডেমু ট্রেন বালুরঘাট পর্যন্ত আসার কথা থাকলেও তা বুনিয়াদপুর পর্যন্ত চলে। মালদহের গৌড় এক্সপ্রেসেরও বালুরঘাট আসার কথা থাকলেও তা আসে না। সেই ট্রেন ধরতে স্থানীয়দের বালুরঘাট থেকে ছাড়া একটি লিঙ্ক ট্রেনের উপর ভরসা করতে হয়। বালুরঘাট-শিলিগুড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস সময়মতো আসলে তবেই সেই লিঙ্ক ট্রেন ধরতে পারেন যাত্রীরা। ফলে প্রায়শই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। বালুরঘাট থেকে সকালে ছাড়া বালুরঘাট-চিৎপুর তেভাগা এক্সপ্রেস থেকে দু’টি কামরা সরিয়ে বহরমপুরের একটি ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোম ও মঙ্গলবার রাতে দু’দিন বালুরঘাট থেকে হাওড়া পর্যন্ত একটি ট্রেন চলে যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা। যাত্রী নিরাপত্তা নিয়েও যাত্রীদের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। আজও মান্ধাতা আমলের হ্যান্ড প্লাঞ্জারের সাহায্যে ট্রেনের লাইন পরিবর্তন করে এখানে রেল চলাচল হয়। গৌড় লিঙ্ক এবং হাওড়াগামী ট্রেন ছাড়া অন্য ট্রেনগুলিতে নিরাপত্তার কোনও বালাই নেই। রেলপুলিশের জিআরপি ক্যাম্পে জেলা পুলিশের ৭ জন আরপিএফ পালা করে দায়িত্ব পালন করেন। স্টেশন চত্বর ও কামরায় নজরদারি সবই তাঁদের উপর ন্যস্ত। কয়েকমাস আগে বালুরঘাটে কামরার মধ্যে এক বালিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। আগেও বালুরঘাট স্টেশনে বিবাদের জেরে এক রেল কর্মীকে লাথি মেরে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে জড়িয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্টেশন ম্যানেজার। চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের কাছ থেকে হার ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।

সম্প্রতি উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের এক কর্তা বালুরঘাটে এসে স্টেশনে একটি উড়ালপুল তৈরির প্রকল্প খতিয়ে দেখতে এসে বাসিন্দাদের দাবির বিষয়ে আশ্বাস দিলেও কোনও সুরাহা হয়নি। গঙ্গারামপুর রেল উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক অজয় দাসের অভিযোগ, এবারের বাজেটে স্টেশন পরিকাঠামো উন্নতির জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও কাজ শুরুর কোনও উদ্যোগ দেখা নেই। বালুরঘাট লাইনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। ডবল লাইন না হওয়ায় দীর্ঘ অপেক্ষার জেরে যাত্রীদের ভোগান্তি চলছেই।

Advertisement

মমতাকে আর্জি বিশ্বনাথের

বেহাল রেল পরিষেবার হাল ফেরাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখলেন বালুরঘাটের আরএসপি বিধায়ক বিশ্বনাথ চৌধুরী। কয়েকদিন আগে কলকাতায় বিধানসভা চলার ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে তিনি ওই বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দিল্লিতে দরবার করতে অনুরোধ জানান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে সমস্যার বিষয়টি লিখিতভাবে পাঠাতে বলেন। রবিবার বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘বালুরঘাটে হাতে গোনা কয়েকটি ট্রেন চলায় এখানে বাসিন্দারা রেলযাত্রার সুযোগ কম পান। যে দুটি দূরপাল্লার ট্রেন চলে তাতেও যাত্রী পরিষেবায় চরম ঘাটতি রয়েছে।’’ বাম সাংসদদের বদলে রেলের সমস্যা নিয়ে বিশ্বনাথবাবু কেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গেলেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে সরকারের তরফে বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে দরবার হলে কাজ ত্বরান্বিত হবে।’’ সপ্তাহে দু’দিনের বদলে বালুরঘাট-হাওড়া ট্রেনটিকে রোজ চালানো ও বালুরঘাট-চিতপুর তেভাগা এক্সপ্রেস এবং বালুরঘাট-শিলিগুড়ি ইন্টারসিটি ট্রেনটিতে বাতানুকুল কামরার ব্যবস্থা করার জেলাবাসীর দীর্ঘ দাবির বিষয়টি তুলে ধরে বিশ্বনাথবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে দিল্লির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনুরোধ জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন