সাহায্যের হাত ধরে চলছে জীবন

উৎসবের পাশাপাশি প্রতিবাদও

একরাশ অনিশ্চয়তা-উদ্বেগ সঙ্গে রেখেই রবিবার গভীর রাত থেকে উৎসবের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন তিন ত্রাণ শিবিরে থাকা সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। রবিবার থেকেই ছিটমহলের বর্ষপূর্তি উৎসব শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার ও হলদিবাড়ি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪৯
Share:

কোচবিহার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছিটমহল বিনিময়ের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সেই শহরেরই আর এক প্রান্তে ব্রাহ্মসমাজ মন্দির এলাকায় সাবেক ছিটের বাসিন্দাদের দুর্গতি কাটেনি বলে দাবি করে সভা করলেন মানব অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

একরাশ অনিশ্চয়তা-উদ্বেগ সঙ্গে রেখেই রবিবার গভীর রাত থেকে উৎসবের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন তিন ত্রাণ শিবিরে থাকা সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। রবিবার থেকেই ছিটমহলের বর্ষপূর্তি উৎসব শুরু হয়েছে।

Advertisement

কোথাও শিবিরের বাসিন্দাদের রেশন কার্ড, একশো দিনের প্রকল্পের জব কার্ড, সাইকেল বিলি করা হয়েছে। কোথাও আবার বাজি পটকা পুড়িয়ে উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। উৎসবের সঙ্গে প্রতিবাদও হয়েছে। মধ্যরাতে যখন বাসিন্দাদের একাংশ বাজি পটকা পোড়ানোর আয়োজন করেছে সেই সঙ্গে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদেরও আয়োজন হয়েছে।

সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ এবং হলদিবাড়িতে শিবির করে রাখা হয়েছে। সেই শিবিরের হাল নিয়েও বিস্তর অভাব অভিযোগ রয়েছে। বর্ষপূর্তির কয়েক দিন আগে থেকেই বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন মানব অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি।

Advertisement

প্রতিবাদ জানাতে তাঁরা বেছে নিয়েছেন বর্ষ পূর্তির দিনকেই। এ দিন রবিবার সাবেক ছিটমহলে এক বছরেও কোনও উন্নয়ন না হওয়ার অভিযোগ তুলে মুখে কালো কাপড় বেঁধে পদযাত্রা করেন তাঁরা। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের একাংশকে কোচবিহার শহরে নিয়ে এসে স্টেশন মোড় থেকে ব্রাহ্ম মন্দির পর্য়ন্ত পদযাত্রা করেন। সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত অভিযোগ করেন, বর্ষপূর্তি উৎসব তাঁরাও করতে চেয়েছিলেন। সেই উৎসবের মধ্যে অনুন্নয়ন নিয়ে প্রতিবাদও করা হত। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, “সাবেক ছিটমহলগুলিতে এক বছরে কোনও উন্নয়ন হয়নি। তা সেখানে গেলেই চোখে দেখা যায়। তাই আমাদের প্রতিবাদ। এখন নানা ভাবে সেখানকার মানুষদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, রবিবার রাত ১২ টায় প্রত্যেক বাসিন্দা তাঁদের বাড়ির সামনে একটি করে মোমবাতি জ্বালাবেন। এটা বিদ্যুৎ না পাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তবে প্রতিবাদের সঙ্গে আশার কথাও জুড়েছে সংগঠন। দীপ্তিমানবাবুর কথায়, ‘‘প্রতিবাদের মতো মোমের আলো আশারও প্রতীক। বাসিন্দাদের উন্নয়ন হবে বলে আমরা আশা রাখি।’’

আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসনও। জেলা প্রশাসনের তরফে কোচবিহার শহরের ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছিটমহল বিনিময়ের বর্ষপূর্তি উৎসব পালন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে জেলার তিনটি ত্রাণশিবিরের পাশাপাশি সাবেক বাংলাদেশি ছিটমহল থেকেও বাসিন্দারা যোগ দেন। প্রশাসন বাস ভাড়া করে ওই বাসিন্দাদের নিয়ে আসে। সেখানে বাসিন্দাদের মধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড, জব কার্ড, সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল বিলি করা। ওই অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন সহ জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী রবিবাবু বলেন, “সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের উন্নয়নে নানা কাজ শুরু হয়েছে। খুব দ্রুত সব কিছু পাল্টে যাবে। কিন্তু কিছু মানুষ বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।’’ প্রশাসনের কাছে রবিবাবুর আর্জি, যারা বিভ্রান্তকর প্রচার করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

হলদিবাড়ির শিবিরের বাসিন্দারা বাজি-পটকা কিনেছেন নিজেরা চাঁদা তুলে। তুবড়ি, হাউই বাজি কিনেছেন। শিবিরে ৯৬টি পরিবার রয়েছে। সব বাড়ির সামনে আলো দিয়ে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। রাতের বেলায় মশাল মিছিলের পরিকল্পনাও রয়েছে। বাসিন্দা হরি বর্মন বলেলন, ‘‘অনেক কিছু দাবি পূরণ হয়নি ঠিকই। কিন্তু তাই বলে স্বাধীনতা উদযাপন করব না, তা কখনও হয়? বাজি-পটকা কিনে আনা হয়েছে। কেউ কেউ আবিরও কিনেছেন। রাতে শোভাযাত্রার প্রস্তাবও দিয়েছেন অনেকে। দেখা যাক কতটা কী হয়।’’ রবিবার বিকেল থেকে দফায় দফায় বৈঠক করছেন হলদিবাড়ি শিবিরের বাসিন্দারা। আজ, সোমবার প্রশাসন ও তৃণমূলের পক্ষ থেকেও একাধিক অনুষ্ঠান করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

ক্ষোভ বিক্ষোভের মাঝেই বর্ষপূর্তির আনন্দে সামিল হওয়ার সুযোগও হাতছাড়া করতে রাজি নন সাবেক ছিটমহল থেকে এসে ত্রাণ শিবিরে ঠাই পাওয়ায় বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন