কলেজ ভোট

টিএমসিপির দ্বন্দ্বে উত্তরে বাড়ছে উত্তাপ

ছাত্র সংসদের মনোনয়ন তোলা-জমা দেওয়া নিয়ে উত্তরবঙ্গে গোলমাল, অভিযোগ চলছেই। বিরোধীদের অভিযোগ, মঙ্গলবারও অধিকাংশ কলেজে তাঁদের কর্মী সমর্থকদের ঢুকতে দেয়নি টিএমসিপি। কোথাও আবার টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই মারপিট হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:০৩
Share:

বালুরঘাট গার্লস কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে উচ্ছ্বাস টিএমসিপির। মঙ্গলবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

ছাত্র সংসদের মনোনয়ন তোলা-জমা দেওয়া নিয়ে উত্তরবঙ্গে গোলমাল, অভিযোগ চলছেই। বিরোধীদের অভিযোগ, মঙ্গলবারও অধিকাংশ কলেজে তাঁদের কর্মী সমর্থকদের ঢুকতে দেয়নি টিএমসিপি। কোথাও আবার টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই মারপিট হয়েছে। কোচবিহারের মাথাভাঙায় টিএমসিপির গোষ্ঠী সংঘর্ষের সময় গুলি চালানোর অভিযোগও ওঠে। জলপাইগুড়িতে দুই গোষ্ঠীর সমর্থকরাই শহরে বহিরাগতদের জড়ো করেছিল বলে অভিযোগ। উত্তেজনা ছিল শহরে। দক্ষিণ দিনাজপুরে ছাত্র সংগঠনের বিবাদ মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয় খোদ তৃণমূল সাংসদকে।

Advertisement

কোচবিহারের মাথাভাঙা কলেজে টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর বিবাদে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর দাবি মানতে না চায়নি। তবে গোলমালের অভিযোগে টিএমসিপির চার সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। সংঘর্ষে জখম হয়েছে অন্তত ১০ জন ছাত্র। দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে অন্তত ৮টি বাইক।

মাথাভাঙা কলেজ বনমন্ত্রী বিনয়চন্দ্র বর্মনের বিধায়ক এলাকার মধ্যে পড়ে। পাশের বিধানসভা এলাকা প্রাক্তন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের। এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ গোলমালের সূত্রপাত। দুই গোষ্ঠীই কলেজের সামনে জড়ো হয়ে নিজের সমর্থকদের মনোনয়ন তুলতে পাঠান। হঠাৎই এক গোষ্ঠীর সদস্যরা লাঠি নিয়ে অন্যদের দিকে তেড়ে যায় বলে অভিযোগ। শুরু হয় সংঘর্ষ। সে সময় এক সমর্থক রিভলভার বের করে গুলিও চালায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

বনমন্ত্রীর অনুগামী টিএমসিপি নেতা বিজয় সরকারের অভিযোগ, ‘‘আচমকা লাঠি নিয়ে তাঁদের সমর্থকদের উপরে হামলা করেন হিতেনবাবুর অনুগামীরা। কলেজের ভিতরে ও বাইরে থাকা তাঁদের সমর্থকদের মারধর করা হয়। তাতে তাঁদের বেশ কয়েকজন জখম হয়।’’

হিতেনবাবুর অনুগামী মাথাভাঙা ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মজিদুল হক পাল্টা দাবি করে বলেন, “শীতলখুচি বিধানসভা এলাকার অনেক ছাত্রছাত্রী কলেজে পড়াশোনা করে। তাঁরা মনোয়ন তুলতে গেলে বাধা দেওয়া হয়।” বিনয়বাবু এবং হিতেনবাবু দুই নেতাই দাবি করেছেন কলেজে কী হয়েছে তা তাঁদের জানা নেই। টিএমসিপির গোষ্ঠী বিবাদে উত্তপ্ত হয়েছিল কোচবিহারের এবিএনশীল কলেজও। জলপাইগুড়ির এসি কলেজ, কর্মাস কলেজ এবং প্রসন্নদেব মহিলা কলেজে টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর সদস্যরা মনোনয়ন তোলে। সব জায়গাতেই এ দিন উত্তেজনা ছিল।

ধূপগুড়ি কলেজে এ দিনও বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। গত সোমবার এবিভিপি সমর্থকদের কলেজে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। মালদহ জেলার ৫টি কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হল টিএমসিপি। সব কলেজেই বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে হামলা হয় বলে অভিযোগ। এ দিন বিকেল চারটের পর কলেজগুলিতে বিজয় উৎসব করে টিএমসিপি। অন্য দিকে, টিএমসিপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পথে নেমেছেন বিরোধীরা। মনোনয়ন পর্বের প্রথম দিনই জেলার মালদহ, গাজল, পাকুয়া, গৌড় কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মনোনয়নের শেষ দিনে তাই কলেজ গুলিতে মোতায়ন ছিল বাড়তি পুলিশ বাহিনী। তবে তাতেও ফল মেলেনি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। কলেজ চত্বরের সামনে গেলেই তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। হলদিবাড়ি কলেজে এসইউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠন মনোনয়ন তুলতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয় এমনকী সংগঠনের পার্টি অফিসেও টিএমসিপি ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। এসইউসির হলদিবাড়ি ব্লকের সম্পাদক এবং দু’জন ছাত্র সমর্থকে ভর্তি করা হয়েছে বলে দাবি। টিএমসিপি হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিবাদ মেটাতে দক্ষিণ দিনাজপুরে আসরে নামেন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ। সূত্রের খবর, সাংসদ নির্দেশ দেন, বালুরঘাট কলেজের ৪৮টি আসনের মধ্যে টিএমসিপি-র বিপ্লব মিত্র অনুগামীরা ৩৪টি এবং প্রাক্তন মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী অনুগামীরা ৪টি আসনে মনোনয়ন জমা দেবে। সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয় দুই গোষ্ঠীর সদস্যরাই। টিএমসিপির জেলা সভাপতি অতনু রায় বলেন, ‘‘সাংসদের নির্দেশ মেনেই পদক্ষেপ হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন