স্টেশনে ট্রেন কই

জলপাইগুড়ি শহরের দুটি স্টেশনেই পরিকাঠামো, যাত্রী পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কোনও স্টেশনের কাউন্টারে টিকিটের দালালচক্রের দাপট কোথাও আবার রাতের বেলায় সমাজবিরোধীদের আড্ডা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ০২:৫২
Share:

অব্যবস্থা: জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনের সহায়তা কেন্দ্র এ ভাবেই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। নিজস্ব চিত্র

থামে না। স্টেশন ছুঁয়ে চলে যায় ষাট জোড়া ট্রেন। তাই দিনের বেশির ভাগ সময় সুনসান থাকে এই স্টেশন। আরেকটি স্টেশন অপেক্ষায় রয়েছে কবে সবুজ পতাকা দেখানো হবে আর্ন্তজাতিক সীমান্তে। হলদিবাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ ট্রেন চলাচল শুরু হলেই হাল ফেরার আশায় রয়েছে স্টেশন। জলপাইগুড়ি শহরের দুটি স্টেশনেই পরিকাঠামো, যাত্রী পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কোনও স্টেশনের কাউন্টারে টিকিটের দালালচক্রের দাপট কোথাও আবার রাতের বেলায় সমাজবিরোধীদের আড্ডা। জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী এজলাসে শুনানি হলে দুরপাল্লার সব ট্রেনই থামবে স্টেশনে। রেলের নিয়ম অনুযায়ী কোনও শহরে হাইকোর্ট থাকলে সেখানকার স্টেশনে সব ট্রেন থামতে হবে। কিন্তু আদৌও কি স্টেশনে দুরপাল্লার ট্রেন থামার পরিকাঠামো রয়েছে? যদিও বাসিন্দাদের দাবি, দু’একটি দুরপাল্লার ট্রেন থামলেই বদলে যাবে স্টেশনের পরিকাঠামো। শহরের অর্থনীতিও।

Advertisement

সত্তরে মাত্র ১১

নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশন থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন। এনজেপিতে গড়পরতা ১৪০টি ট্রেন থামে, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে স্টপেজ মাত্র ১১টি দুরপাল্লার ট্রেনের। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে দুটি দুরপাল্লার ট্রেন যাতায়াত করে। কলকাতা হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং তিস্তা তোর্সা। দার্জিলিং মেলের কোচও যাতায়াত করে টাউন স্টেশন দিয়ে। পদাতিক এক্সপ্রেসের স্টপেজের দাবিতে শহরের বাসিন্দারা আন্দোলন চালাচ্ছেন অনেকদিন।

Advertisement

কাউন্টারে গেঞ্জি পরা কে?

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটা। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনের অনুসন্ধান কাউন্টারে গুয়াহাটি যাওয়ার ট্রেন কখন মিলবে জানতে চাইলে উত্তর মিলল স্যান্ডো গেঞ্জি পরা এক ব্যক্তি থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তিনি রেলকর্মী নন। তবে স্টেশনের পরিচিত মুখ বলে দাবি নিত্যযাত্রীদের। অভিযোগ, ততকাল টিকিট দেওয়া শুরু হতেই জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে দালাল-রাজ শুরু হয়। লাইন নিয়ন্ত্রণ করেন পরিচিত কিছু মুখ। আগে কেউ গেলেও তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। দুপুরে সেই গেঞ্জি পরা ব্যক্তিকে দেখা গেল টিকিট সংরক্ষণ কাউন্টারের ভিতরে দাঁড়িয়ে।

সাফাইকর্মী এক জন

দুটি প্ল্যাটফর্ম। একটিতে আপ ট্রেন থামনে অন্যটিতে ডাউন। স্টেশনে রয়েছেন মাত্র একজন সাফাই কর্মী। সপ্তাহে তিন দিন লাগোয়া দোমহনী থেকে আসেন আর একজন সাফাইকর্মী। কিন্তু মাস কয়েক পরে তিনি অবসর নেবেন। কোনওদিন পয়েস্টসম্যান না এলে সাফাইকর্মীকেই সবুজ পতাকা ধরতে হয়। স্টেশনে ঢোকার মুখে কুকুর শুয়ে থাকে, প্ল্যাটফর্মে যত্রতত্র চারপেয়ে ঘুরে বেড়ায়।

‘হেল্প’-করার কেউ নেই

জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে ঢাউস কাউন্টার। বড় করে লেখা ‘মে আই হেল্প ইউ’। তবে সেই কাউন্টার কিসের তা কেউ জানে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে টাউন স্টেশনের ম্যানেজারের ঘরে বসে ছিলেন এক কর্মী। কাউন্টারটি কিসের? সেই কর্মীর উত্তর, “আমি ডিউটিতে নেই, বলতে পারব না। বিশ্বাসবাবু ডিউটিতে আছেন।” বিশ্বাসবাবুও বলতে পারলেন না কাউন্টার কিসের। তাঁর উত্তর, “বাংলাদেশের সঙ্গে রেল চলাচল শুরু হবে। তখন কাউন্টার চালু হতে পারে।”

সবটাই অতীত

এক সময়ে রবীন্দ্রনাথ নেমেছিলেন জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে। শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের বছর দু’য়েক আগে জলপাইগুড়িতে স্টেশন তৈরি হয়েছিল। সেই স্টেশনে এখনও রয়েছে হাতে টানা সিগন্যাল। এক নিত্যযাত্রীর কথায়, “এতেই বোঝা যায় এখনও কতটা পিছিয়ে রয়েছে এককালের অভিজাত স্টেশন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন