তিস্তা সেচ প্রকল্পে ইতি রাজ্যের

সত্তরের দশকে শুরু হওয়া তিস্তা প্রকল্পকে বছরের পর বছর টেনে নিয়ে যাওয়া বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছে দফতর।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০৬
Share:

পরিদর্শন: গজলডোবায় গিয়ে বৃহস্পতিবার তিস্তার উপরে ব্যারাজের স্বয়ংক্রিয় গেট তৈরির কাজ দেখলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

চার দশক ধরে ‘নির্মীয়মাণ’ অবস্থায় থাকা তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজে আপাতত দাঁড়ি টানল সেচ দফতর। প্রকল্পে প্রস্তাবিত যে সব জমিতে এখনও তিস্তা প্রকল্পের জল পৌঁছনোর পরিকাঠামো তৈরি করা যায়নি, সেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে সেচ করবে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত আদতে কয়েক দশকের পুরোনো তিস্তা সেচ প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণাই বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

সত্তরের দশকে শুরু হওয়া তিস্তা প্রকল্পকে বছরের পর বছর টেনে নিয়ে যাওয়া বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছে দফতর।

বৃহস্পতিবার সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রায় চল্লিশ বছর আগে যে জমিতে জলের প্রয়োজন ছিল, সেখানে আজকের দিনে হয়ত সেচের জল পৌঁছে গিয়েছে। সে সব নিয়ে সমীক্ষা চলছে। যেখানে এখনও খাল কাটা হয়নি সেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে অথবা অন্য ভাবে ক্ষুদ্র সেচের ব্যবস্থা করা হবে।’’ বর্তমানে যে সব জমিতে তিস্তার জল পৌঁছোতো তা স্বাভাবিক ভাবেই যাবে বলে দফতর জানিয়েছে। বোরো মরসুমে কবে থেকে জমিতে জল দেওয়া হবে তা নিয়ে আগামী ডিসেম্বরে কলকাতায় সেচভবনে বৈঠকও রয়েছে।

Advertisement

এক সময় তিস্তা প্রকল্পকে ‘সাদা হাতি’ বলে কটাক্ষ করতেন সেচ কর্তারা। তিস্তার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের বড় নদীগুলিকে ক্যানেলের মাধ্যমে সংযোগ ঘটিয়ে সেখান থেকে সেচখাল কেটে জমিতে নিয়ে গিয়ে চাষের জল দেওয়াই ছিল তিস্তা সেচ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পকে মূল ৩টি পর্যায় এবং নানা উপপর্যায়ে ভাগ করে কাজ শুরু হয়। তার পর কয়েক দশক কেটে গেলেও ৯ ভাগের এক ভাগ কাজও শেষ হয়নি। ৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের জল দেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সমীক্ষা চালিয়ে প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ ৩ লক্ষ ৪২ হাজার হেক্টরে নামিয়ে আনা হয়। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত প্রায় ৫০টি মামলা ঝুলে রয়েছে। সূত্রের খবর, গত পাঁচ বছর ধরে সেচখাল তৈরির কাজ পুরোপুরি বন্ধ। এখন জল যায় এক লক্ষের কিছু বেশি পরিমাণ জমিতে। তিস্তার সঙ্গে মহানন্দা নদীকে ক্যানেলের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া হলেও অন্য নদীগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয়নি।

এক সময়ে জাতীয় প্রকল্পের মর্যাদা পাওয়া তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজে ঢিলেমির জন্য সে স্বীকৃতিও হারিয়েছে। গত বছর অগস্টে প্রকল্পের ‘পরিকল্পনা’ এবং ‘নকশা’ দু’টি বিভাগই তুলে দেয় সেচ দফতর। তখন থেকেই প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে জল্পনা চলছিল। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি লাগোয়া গজলডোবায় তিস্তা সেচ নিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্য যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটাল।

তাই প্রশ্ন উঠছে প্রকল্পে প্রস্তাবিত সেচ জমির কী হবে?

সেচ দফতর জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের যে এলাকায় এখনও খাল কাটা হয়নি, সেখানে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পের মাধ্যমে সেচের জল দেওয়া হবে। নয়ত গভীর নলকূপ অথবা অন্য কোনও ভাবে এলাকাভিত্তিক ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। সেচমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এর ফলে কৃষকরাই লাভবান হবেন। বিশাল তিস্তা প্রকল্প কবে শেষ হবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। তার আগেই সেচের জলের প্রয়োজন মিটবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন