তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, অপরজন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। — ফাইল চিত্র।
এক সময়ের ‘শত্রু’ বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। আবার নাকি তাঁদের মধ্যে ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে। একজন জেলা তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, অপরজন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। দলীয় সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গ ছেড়ে উদয়নবাবু এখন যুব তৃণমূলের নেতাদের ‘কাছের লোক’ হয়ে উঠেছেন। আর তাতেই দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যেই বিরোধ বাড়তে শুরু করেছে। দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মীর হুমায়ন কবীর প্রকাশ্যেই অভিযোগ করছেন, যারা মিছিল বের করে রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন উদয়নবাবু।
রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, “দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। সবাই একসঙ্গে আছি। কিছু কিছু এলাকায় একদল দুষ্কৃতী দলীয় কর্মীদের উপরে হামলা করছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।” সেই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, যারা তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলছেন তারা দলের কেউ নন। উদয়নবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচনের দিন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছিল। ওই কর্মীরা কারা? তিনি বলেন, “যে কেউই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে তা বাঞ্ছনীয় নয়। আমি কখনও কারও বিরুদ্ধে বলিনি। যাঁরা এমন অভিযোগ করছেন তাঁরা আরও ভাল বলতে পারবেন।” বিধায়কের এক অনুগামীর কথায়, “সভাধিপতি নির্বাচনের দিন আব্দুল জলিল আহমেদের অনুগামীরা নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছিলেন। তাঁরা তো রবীন্দ্রনাথবাবুর ঘনিষ্ঠ।”
২০১৫ সালে ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন উদয়নবাবু। বিরোধী দলে থাকার সময় উদয়নবাবু ও রবীন্দ্রনাথবাবুর সম্পর্ক ভাল ছিল না। উদয়ন তৃণমূলে যোগদান করার পরেও দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে দিনহাটায় সংঘর্ষও হয়। পরে অবশ্য রবি-উদয়নের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দেড় বছরের বেশি সেই বন্ধুত্ব অটুট থাকার পরে আবার তাতে চিড় ধরেছে বলে খবর। দলীয় সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরোধী বলে পরিচিত তৃণমূল যুব সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় ও যুব নেতা নিশীথ অধিকারীর সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয়েছে উদয়নবাবুর। শুধু তাই নয়, দুই নেতার অনুগামীরাও রাস্তায় নেমেছেন। দিনহাটায় যুব ও উদয়নের অনুগামীরা সম্প্রতি একটি মিছিল বের করে। পাল্টা হিসেবে, আগামী ২০ নভেম্বর মিছিলের ডাক দিয়েছে রবীন্দ্রনাথ অনুগামীরা।
দলীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের দায়িত্ব ভাগ নিয়ে কর্তৃত্ব পাননি উদয়নবাবু। তাঁর বিধানসভা এলাকাতেও ছড়ি ঘুরিয়েছেন রবি-অনুগামীরাই। তৃণমূলের দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের সভাপতি মীর হুমায়ন কবীর বলেন, “এমন কোনও বিষয় নেই। আসলে জেলা জুড়ে একটা অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছেন একটি পক্ষ। সেই চেষ্টাই হচ্ছে।” জেলা যুব সভাপতি পার্থবাবু কিছু বলতে চাননি।