খুশি: পরীক্ষার ফল জানার পরে সংস্কারকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন পরিবারের সদস্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
ধারা বদলের ইঙ্গিত স্পষ্ট। দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করে স্কুলের বেশিরভাগ সেরা ছাত্রছাত্রীদের যখন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এমবিএ বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট হওয়ার দিকে ঝোঁক, শহরের ভাল ফল করা দুই মেধাবী চিন্তাভাবনা করছে একটু অন্যরকম। ডন বস্কোর আইএসসি টপার সংস্কারকুমার গুপ্ত হতে চায় সরকারি আমলা এবং বৈভব বার্লিয়া মার্কিন মুলুকে পড়ে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিতে চায়।
মঙ্গলবারই বেরিয়েছে আইএসসি-র ফল। তাতে শিলিগুড়ি শহরে ডন বস্কো থেকে ৯৯.৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে শিলিগুড়ির সম্ভাব্য সেরা হয়েছেন সংস্কার। ৯৯.২৫ শতাংশ পেয়ে সম্ভাব্য দ্বিতীয় হয়েছে বৈভব। শিলিগুড়ি থেকে সম্ভাব্য তৃতীয় মোবার্ট হাইস্কুলের ছাত্র রিদিম লাখোটিয়া পেয়েছেন ৯৯ শতাংশ নম্বর। এদিনই আইসিএসই-রও ফল বেরিয়েছে। শিলিগুড়ি আইসিএসইতে প্রথমের নম্বর ৯৮.৭৫ শতাংশ।
কী বলছেন মেধাবীরা? সংস্কার জানিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছে দিল্লির শ্রীরাম কলেজে পড়ে সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয় দেশের সমস্যা এখন দুর্ণীতি। তাই প্রান্তিক মানুষ সরকারি প্রকল্পের সুযোগ থেকে হয় বঞ্চিত হচ্ছে, না হলে ছিটেফোঁটা পাচ্ছে। তাই একজন ভাল আমলা হতে চাই, যাতে তাঁদের জন্য কিছু করতে পারি।’’ বাবা সন্দীপ গুপ্তর হার্ডওয়্যারের ব্যবসা। মা ললিতা গৃহবধূ।
সাফল্য: পরিবারের সঙ্গে বৈভব বার্লিয়া। নিজস্ব চিত্র
ডন বস্কোর আরও এক ছাত্র বৈভবের স্বপ্ন আরও বড়। আইএসসি পরীক্ষা দিয়েই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ খুঁজছিল। তিনি জানান, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। পরে জননীতি নিয়ে পড়তে চান, যাতে রাজনীতিতে আসতে পারেন। কিন্তু কেন রাজনীতি? বৈভবের কথায়, ‘‘দেশ এখন পিছিয়ে পড়ছে বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ উচ্চশিক্ষিত নয় বলে। তা ছাড়াও আমি পড়াশোনা করে রাজনীতিতে আসতে চাই, যাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু করতে পারি।’’ বাবা হর্ষ বার্লিয়ার চায়ের বাগান রয়েছে। মা শ্বেতা পরিবার সামলান।
ডন বস্কোর অধ্যক্ষ ফাদার মনোজ জোস জানান, এই দুই ছাত্রই প্রথম থেকেই ওই স্কুলে পড়ে। পড়াশোনার বাইরেও নানা রকমের শিক্ষামূলক কাজের সঙ্গে গত কয়েক বছর থেকেই যুক্ত ছিলেন তাঁরা। মনোজ বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রদের সার্বিক উন্নতির দিকে নজর দিই। আমার জেনে ভাল লাগছে, ওরা কোনও না কোনও ভাবে সাধারণ মানুষকে সাহায্যের কথা ভাবছে।’’
শহরে মোবার্ট হাইস্কুলের ছাত্র তথা আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা রিদম লাখোটিয়ার লক্ষ্য ভাল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট হওয়া। আপাতত কলেজ এবং সিএ-র প্রস্তুতি নিতে চান তিনি। চাঁদনি ডালমিয়া পেয়েছেন ৯৭ শতাংশ এবং বনসিকা বর্মা পেয়েছেন ৯৭ শতাংশ নম্বর।
এ দিনই আইসিএসই পরীক্ষারও ফল প্রকাশ হয়েছে। সেন্ট মাইকেলের মায়াঙ্ক কেজরিওয়াল পেয়েছে ৯৮.৪ শতাংশ নম্বর। অভয় গুপ্ত পেয়েছে ৯৮.২ শতাংশ নম্বর। গুড শেফার্ড স্কুলের অনির্বাণ দাস ৯৬.৬ শতাংশ, ঈশান চট্টোপাধ্যায় পেয়েছে ৯৬.৫ শতাংশ এবং অয়ন সিংহ পেয়েছে ৯৬.৪ শতাংশ নম্বর।