হাসপাতাল বন্ধ টানা ৯ দিন ধরে

যন্ত্রণা নিয়ে রোগীরা এসেই চলেছে। যদিও টানা ৯ দিন ধরে হাসপাতালের দরজায় তালা ঝুলছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৬
Share:

সমস্যা: হাসপাতালে রোগীদের এনেও ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। —নিজস্ব চিত্র।

যন্ত্রণা নিয়ে রোগীরা এসেই চলেছে। যদিও টানা ৯ দিন ধরে হাসপাতালের দরজায় তালা ঝুলছে বলে অভিযোগ। হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে এসেও ফিরে গিয়েছেন, এমন কয়েকজন এই অভিযোগই জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। তার পরেও হাসপাতালের দরজা খোলেনি বলে অভিযোগ। অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মীদের একাংশকে ফোন করলে উত্তর মিলেছে, ‘‘পুজোর ছুটি চলছে।’’

Advertisement

জলপাইগুড়ি জেলা পশু হাসপাতালে এই অবস্থা চলছে বলে অভিযোগ। অথচ পশু হাসপাতাল জরুরি পরিষেবা। কর্মীদের পুজোর ছুটি থাকলেও হাসপাতালের পরিষেবা জারি রাখার মতো বন্দোবস্ত করার নির্দেশ রয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা পশু হাসপাতালে অবশ্য উলটপুরাণ চলছে বলে দাবি। ষষ্ঠীর দিন হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, লক্ষ্মীপুজোর পরেও হাসপাতালের গেট তালাবন্ধই রয়েছে। যার জেরে পোষ্য নিয়ে এসে ফিরতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। হাসপাতাল খোলা থাকলেও পরিস্থিতি তেমন বদলাবে না বলে দাবি। মাস দু’য়েক ধরে এই হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক নেই বলে অভিযোগ। বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে টমি, মনু, পেঁচিদের।

কেন হাসপাতাল বন্ধ রয়েছে তা নিয়ে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর থেকে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। জেলা দফতরের উপ অধিকর্তা উত্তম দে বলেন, “এক সঙ্গে সকলের ছুটি হওয়ার কথা নয়। হাসপাতাল তালাবন্ধ কেন খোঁজ নিচ্ছি।” তবে চিকিৎসকের সমস্যা স্বীকার করে নিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর। উপ অধিকর্তা বলেন, “কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, দেখছি।”

Advertisement

লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন দুপুরে মনুকে কুকুরে কামড়েছে। ছোট দুই ছেলেমেয়ে আছে আড়াই বছরের মনুর। বাড়ির পাশে মাঠে ঘাস খেতে গিয়েছিল মনু। তখনই বাঁ পায়ে কুকুর কামড়েছে। পরপর তিন দিন টোটোতে চাপিয়ে মনু এবং তার দুই ছেলেমেয়েকে জলপাইগুড়ির স্টেশন রোডের পশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন অজয় রহমান এবং বেবি খাতুন। তিন দিনই ফিরতে হয়েছে। এ দিন বৃহস্পতিবার পশু হাসপাতালের গেটে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন দম্পতি। টোটোচালক অজয় বলেন, “তিন দিন হয়ে গেল ছাগলটাকে কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক দিতে পারলাম না। ছোট দুটি বাচ্চা মা ছাগলের দুধ খাচ্ছে, ওদের গা চাটছে। ওগুলিও তো জলাতঙ্কে মারা পড়বে।” বেবি খাতুনের চিন্তা অবশ্য অন্য। তাঁর পাঁচ বছরের ছেলে রয়েছে হীরা। বেবি খাতুন বললেন, “আমার ছেলেটা ছাগলের বাচ্চাগুলোকে খুব ভালবাসে। ধরতে না দিলে কান্নাকাটি করে। ওর শরীরেরও তো রোগ ছড়াতে পারে। বেসরকারি কোথাও গিয়ে চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।“

গত অগস্টে জেলা পশু হাসপাতালের চিকিৎসকের বদলি হয়। তারপর কোনও স্থায়ী চিকিৎসক আসেনি হাসপাতালে। হাসপাতাল খোলা থাকলেও বাসিন্দাদের অন্য অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পোষা কুকুরকে নিয়ে পুজোর আগে হাসপাতালে এসেছিলেন সায়ন্তিকা পাল। সায়ন্তিকা বললেন, “পেটে ব্যথায় কুকুরটা ছটফট করছিল বুঝতে পারছিলাম। হাসপাতালে আসার পর শুনলাম চিকিৎসক নেই। যিনি ফার্মাসিস্ট তিনিই ওষুধ দিলেন। সরকারি হাসপাতালের হাল এমনই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন