মোবাইলে রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে বারবার। সাধারণত এমনটা হয় না। খুব ব্যস্ত থাকলেও পরের পর ফোন বাজলে অন্তত ‘ব্যস্ত আছি’টুকু বলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ এবং চা শ্রমিক নেতা জন বার্লা। বুধবারের দুপুর ছিল ব্যতিক্রম। সদ্য সুখবরটি এসেছে। ডুয়ার্সের শ্রমিক নেতাদের একাংশের কথায়, যে খবর ‘ঐতিহাসিক।’ এ দিন বুধবার দুপুরে অভিনেতা দিলীপ কুমারের প্রয়াণ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ নিয়ে চর্চা চলেছে এক সূত্রে গেঁথে। গেঁথে দিয়েছে এক জনই, সাগিনা মাহাতো।
দিলীপ কুমার আর উত্তরবঙ্গের মধ্যে যোগসূত্র সম্ভবত ওই একটি নামই। ১৯৫৮ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত গৌরকিশোর ঘোষের গল্প নিয়ে ১৯৭০ সালে তপন সিংহের ছবি। পাহাড় ও ডুয়ার্সের দোর্দণ্ডপ্রতাপ আদিবাসী চা শ্রমিক নেতা সাগিনার ভূমিকায় দিলীপ কুমার। শিলিগুড়ির উপকন্ঠে তিনধারিয়ার রেল ওয়ার্কশপে এখনও সেই ছবির কথা মনে পড়িয়ে দেয়।
কে ছিল সাগিনা? তার এক ডাকে এককাট্টা হয়ে যেত শ্রমিক মহল্লা। শ্রমিকদের সমর্থনে একসময়ে সে পৌঁছে গিয়েছিল সাহেব রেল কোম্পানির বোর্ডে। বার্লার এ দিনের উত্থানও যেন তেমনই। ডুয়ার্সের কোনও চা শ্রমিক নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন এই প্রথমবার।
বাম আমলের শেষের দিকে জনজাতি আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন জন বার্লার। তখন ডুয়ার্সের চা শ্রমিকদের আন্দোলনের দু’জন মুখের একজন ছিলেন জন। জনজাতি চা শ্রমিকদের দাবিতে লাগাতার ধর্মঘট-অবরোধের ডাক দিয়ে শিরোনামে চলে এসেছিলেন তিনি। ঠিক যেমন গৌরকিশোরের সাগিনার হাতিয়ার ছিল শ্রমিকদের এক করে ধর্মঘট।
কিন্তু শুধুই কি বার্লা? সাগিনার ছায়া আরও অনেকের মধ্যেই খুঁজে পাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের মানুষজন। যেমন, বিমল গুরুং। অনেকেই বলছেন, রাজনীতির উত্থানে, দাপটে গুরুংয়ের মধ্যেও রয়েছে সাগিনার ছায়া। কেউ কেউ এই ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন বাম নেতা লাল শুক্রা ওরাওঁয়ের মধ্যেও। পাহাড়-ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে বহু সাগিনা যেমন জন্ম নিয়েছেন, তেমনিই সাগিনার মতো শ্রমিকদের ক্ষোভেরও শিকার হয়েছেন। দলগাঁওয়ে চা শ্রমিক নেতা তারকেশ্বর লোহারকে শ্রমিকরা ‘বিশ্বাসঘাতক’ দেগে দিয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান বলে অভিযোগ। সেই হামলায় খুন হয়েছিলেন ১৯ জন। তারকেশ্বর অবশ্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল।
গৌরকিশোর ঘোষের সাগিনা ক্ষমতার চুড়ো থেকে এক সময়ে ছিটকে পড়েছিল নীচে। কিন্তু উত্তরের চা বাগান নতুন নেতার জন্মের দিন তাঁর অগ্রগতির দিকেই তাকিয়ে রয়েছে এখন। দিল্লির ক্ষমতার বৃত্ত থেকে জন বার্লা এখন কী এনে দেবেন বাগানের আম-শ্রমিকদের, এর পরে তারই অপেক্ষা।