জমানা বদলে বদলেছে জার্সিও

সেই নেতারা বেশিরভাগই এক বছর আগে গ্রেফতার হন জালনোট, আফিমের কারবার, খুন সহ একাধিক মামলায়। বকুল ও জাকির শেখ এক বছরের বেশি জেলে বন্দি। প্রায় বছর খানেক বন্দি ছিলেন আশাদুল্লাও।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৮
Share:

বাম জমানায় কালিয়াচকের মোজমপুর ও নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে শেষ কথা বলত সিপিএম। প্রচার রয়েছে, সে সময় সিপিএমের তত্কালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা আসাদুল্লা বিশ্বাসের দাপটে ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় বাঘ-গরুতে একঘাটে জল খাওয়ার জোগাড় ছিল। তাই, জেলা পরিষদ ভোট সেখানে কোনওরকমে হলেও কী পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি দুই স্তরেই সব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হত সিপিএম। আর জেলা পরিষদের ভোটে বিরোধী দলগুলির প্রার্থীরা ওই দুই পঞ্চায়েতে একটি দু’টি বা তিনটি করে ভোট পেত।

Advertisement

জমানা বদলের পর সেই আসাদুল্লা জার্সি পাল্টে চলে যান তৃণমূলে। সঙ্গে সঙ্গে দুই পঞ্চায়েতেরও ছবি বদলে যায়, লাল রং বদলে সবুজ হয়ে যায় দুই মহল্লা। আর তাই, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েতে সেই আসাদুল্লা, বকুল শেখ, জাকির শেখদের হাত ধরে মোজমপুর পঞ্চায়েতের ১৪টি আসন ও নওদা যদুপুরের ২৩টি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। মোজমপুরের পঞ্চায়েত সমিতির দু’টো আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় তৃণমূল, ৩৩ নম্বর আসনটিতে জয়ী হন খোদ আসাদুল্লা বিশ্বাস। এ ছাড়া, নওদা যদুপুরেরও তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি আসনেও তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল।

কেমন ছিল সেই ভোট? নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ওই দুই পঞ্চায়েতের ৪০টি বুথের একাধিক বুথে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা ভোটই পাননি। যেমন, মোজমপুর জুনিয়র গার্লস স্কুলের একটি বুথে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭১৫টি ভোট, সেখানে সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট শূন্য। ওই স্কুলেরই আর একটি বুথে তৃণমূলের প্রাপ্তি ৫৭৫ ভোট, কংগ্রেস ৪ ও সিপিএম শূন্য। আবার নওদা যদুপুর পঞ্চায়েতের অনুপনগর জগদীশপুর প্রাইমারি স্কুল বুথের ফলাফল তৃণমূল ৬৫১, কংগ্রেস ১ ও সিপিএম শূন্য।

Advertisement

সেই নেতারা বেশিরভাগই এক বছর আগে গ্রেফতার হন জালনোট, আফিমের কারবার, খুন সহ একাধিক মামলায়। বকুল ও জাকির শেখ এক বছরের বেশি জেলে বন্দি। প্রায় বছর খানেক বন্দি ছিলেন আশাদুল্লাও। হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন কিন্তু জেলায় ঢোকার ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এখন প্রশ্ন, দাপুটেরা কেউ জেলবন্দি বা কেউ জেলার বাইরে থাকলেও বিরোধীরা কি এই দুই পঞ্চায়েতে প্রার্থী দাঁড় করাতে পারবে? নাকি ফের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই তৃণমূল জয়ী হবে? কালিয়াচক ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘‘আসাদুল্লা জেলার বাইরে থাকলেও প্রভাব মোজমপুরে কাজ করছে। নওদা যদুপুরে বকুল জেলে বন্দি থাকলেও তার ভাই রাজু শেখ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। ফলে সন্ত্রাসের আবহ দুই পঞ্চায়েতেই রয়েছে। তবুও প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ওই দুই এলাকায় শাকদলের সন্ত্রাস রয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না জন্য এমন কথা বলছে। কোথাও কোনও সন্ত্রাস নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন