Labourers

কাশ্মীরি পড়শিদের ভুলছেন না রিটুরা

বাড়িতে যোগাযোগের সব মাধ্যমই এক রকম বন্ধ। ফোন, ইন্টারনেট চলছে না। কাজও নেই। তাই, আর সাত পাঁচ না ভেবে জীবন বাঁচাতে ঝুঁকি ও বাড়তি টাকা খরচ করে পড়শিদের কথায় কাশ্মীর থেকে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন অনেকে।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

গোলাপগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০৪:২০
Share:

ফেরা: চকমাইলপুরের বাড়িতে ফিরেছেন তিন শ্রমিক (বাঁ দিক থেকে) মহম্মদ মফিজউদ্দিন সুভান শেখ ও সলেমান আলি। নিজস্ব চিত্র।

হালত খারাব হ্যায়, ভাগ যাও’—কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর থেকেই কখনও কাশ্মীরের প্রতিবেশীরা, কখনও সেনা জওয়ানেরাও এ কথা বলেছেন মালদহ বা উত্তর দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ভূস্বর্গে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের। বিপদের সময় কাশ্মীরের সেই পড়শিরাই তাঁদের পাশে দাঁড়ান, তাঁদের ভুলছেন না ওই শ্রমিকেরা।

Advertisement

বাড়িতে যোগাযোগের সব মাধ্যমই এক রকম বন্ধ। ফোন, ইন্টারনেট চলছে না। কাজও নেই। তাই, আর সাত পাঁচ না ভেবে জীবন বাঁচাতে ঝুঁকি ও বাড়তি টাকা খরচ করে পড়শিদের কথায় কাশ্মীর থেকে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন অনেকে। চার দিন বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে কোনও রকমে বাড়ি ফিরে এসেছেন মালদহের বাংলাদেশ সীমান্ত গোলাপগঞ্জের অন্তত জনা দশেক শ্রমিক। ফেরার আগে ঘরে মজুত থাকা আনাজপাতিও অর্ধেক দামে বিক্রি করেছেন। কয়েক হাজার টাকা মজুরিও বকেয়া ফেলে এসেছেন। তাদের পণ, কাজে আর অন্তত কাশ্মীরে নয়।

কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোলাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি গ্রাম গোপালনগর ও চকমাইলপুর। মাস চারেক আগে এই দুটি গ্রামের অন্তত ১০ জন শ্রমিক কাজের জন্য গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। বারামুলা জেলার জি টি কলেজ রোডে বাড়ি ভাড়া করে তাঁরা থাকতেন। ভাড়া মাথা পিছু ৫০০ টাকা। এক ঘরে থাকতেন ডালু মিয়াঁ, সায়েম শেখ, রিটু শেখ, পল্টু মিয়াঁ সহ সাত জন। আর একটি ঘরে থাকতেন সোলেমান আলি, তাঁর ছেলে সুভান ও মহম্মদ মফিজুদ্দিন ও অন্য দু’জন। তাঁরা নিজেরাই রান্না করে খেতেন। যে ঘরে থাকা সেই ঘরেই রান্না। তাঁরা জানান, কাশ্মীরের তাঁরা মূলত আপেল বাগান পরিচর্যা, ফুলের বাগান চাষ ও পরিচর্যা, পাহাড়ের ঢালে আনাজ চাষ, পাকা বাড়ি তৈরির মতো কাজ করতেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ। যে কোন কাজেই মজুরি মাথা পিছু সাড়ে চারশো টাকা।

Advertisement

চকমাইলপুরের বাসিন্দা সোলেমান বলেন, ‘‘এই মাসের পয়লা তারিখ থেকেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি অন্য রকম হতে শুরু করেছিল। সে দিন থেকেই ট্রাকে করে কাশ্মীরে ঢুকতে শুরু করে সেনা জওয়ানরা। আর ৫ তারিখ পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। চারদিকে শুধু আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে সেনা আর সেনা। ফলে দিনমজুরের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’’ মফিজউদ্দিন বলেন, ‘‘চার মাস আগে প্রথম যখন কাশ্মীরে কাজে গিয়েছিলাম, তখন থেকেই রাস্তায় রাস্তায়, পাড়ার মোড়ে মোড়ে সেনা জওয়ানদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। আমরা যে শ্রমিক তার পরিচয় জানান দিতে সব সময় গলায় গামছা নিয়েই রাস্তাঘাটে যাতায়াত করতে হত। আর সঙ্গে থাকত আধার কার্ড। এটাই দস্তুর। আর তা না থাকলেই বন্দুকের নল উঁচিয়ে থাকা সেনাদের জেরার মুখে পড়তে হত।’’

ডালু মিয়াঁ বলেন, ‘‘বাড়ির মালিক সাবির ডার আমাদের সাত জনকেই ডেকে জানিয়ে দেন, ‘হালত খারাব হ্যায়। ভাগ যাও।’ একই কথা সেনাদেরও।’’ তার পরেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেন তাঁরা। ডালু, সিটু, সায়েমরা বলেন, ‘‘দু’মাসের চাল, ডাল আনাজপাতি আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। মজুরির টাকারও খোঁজ করিনি। ১৪ তারিখ সেনারাই সন্ধে নাগাদ একটা টাটা সুমো জোগাড় করে দেন। তিন গুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হয়। তার পরে জম্বু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে কামরায় প্লাস্টিক পেতে বসে ১৯ তারিখ বাড়ি ফেরেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন