রাতের হাসপাতাল

ঝুঁকি, উদ্বেগ নিয়েই জেগে থাকেন সবাই

দিনের বেলায় রাস্তা। রাতেই তা হয়ে দাঁড়ায় বিছানা! রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে রাতের ছবিটা এমনই। যে কোনও দিন রাত ১টা নাগাদ হাসপাতালে গেলেই দেখা যায়, রোগীদের পরিজনেরা হাসপাতাল চত্বরের খোলা আকাশের নিচে যত্রতত্র শুয়ে রয়েছেন।

Advertisement

গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৬
Share:

রাতে এ ভাবেই কাটান রোগীর পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

দিনের বেলায় রাস্তা। রাতেই তা হয়ে দাঁড়ায় বিছানা!

Advertisement

রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে রাতের ছবিটা এমনই। যে কোনও দিন রাত ১টা নাগাদ হাসপাতালে গেলেই দেখা যায়, রোগীদের পরিজনেরা হাসপাতাল চত্বরের খোলা আকাশের নিচে যত্রতত্র শুয়ে রয়েছেন। কেউ চাদর, আবার কেউ মাদুর পেতে। কারও আবার খবরের কাগজই সম্বল। অনেকে আবার বৃষ্টির কথা ভেবে জরুরি বিভাগে যাওয়ার শেডযুক্ত রাস্তা দখল করে মশারি খাটিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছেন। কয়েকজন জায়গা না পেয়ে বসে রয়েছেন। মশা মারার ধূপই তাঁদের ভরসা।

তবে এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। রোগীর পরিজনদের রাতে থাকার জন্য ২০০৪ সালে রায়গঞ্জ পুরসভার উদ্যোগে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল চত্বরে একটি ভবন গড়ে ওঠে। কিন্তু সেখানে মাত্র ৪০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই জায়গার অভাবে সেখানে বহু রোগীর পরিবারের লোকেরা থাকতে পারেন না। ভবনটি হাসপাতাল চত্বরে থাকলেও হাসপাতালের মূল ভবন থেকে সেটি প্রায় ১০০ মিটার দূরে হওয়ায় রোগীদের আপদ-বিপদে তাড়াতাড়ি ওয়ার্ডে পৌঁছনো সম্ভব হবে না, এই আশঙ্কায় অনেকেই সেখানে থাকেন না। এ ছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের উল্টোদিকে একটি আধুনিক বিশ্রামাগারও তৈরি করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সেটিও রাত ৮টা বাজতেই বন্ধ করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই রাতে রোগীর পরিজনদের অনেককেই কাটাতে হয় খোলা আকাশের নীচে। ঝড়বৃষ্টি হলে তাঁরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।

Advertisement

হাসপাতাল সুপার গৌতম মন্ডলই বলছেন রোগীদের পরিবারের লোকেদের জন্য তৈরি হওয়া ওই বিশ্রামাগারটি কেন সারারাত খোলা থাকে না তা তাঁর জানা নেই। তিনি জানান, বিশ্রামাগারটি হাসপাতালের সহকারি সুপারের অধীনে রয়েছে। গৌতমবাবুর আশ্বাস, ‘‘আমি সহকারী সুপারের সঙ্গে কথা বলে বিশ্রামাগারটি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা যায় কি না, তা দেখছি।’’ সহকারি সুপার গৌতম দাসের দাবি, বিশ্রামাগারটি উদ্বোধন হওয়ার পর কিছুদিন সেটি সারারাত খোলা রাখা হয়েছিল। কিন্তু রোগীদের পরিবারের লোকেদের নাম করে দুষ্কৃতীরা রাতভর সেখানে নেশার আসর বসাত। তাই পরবর্তী সময় থেকে বিশ্রামাগারটি সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু, দুষ্কৃতী-রাজ কড়া হাতে মোকাবিলা না করে বিশ্রামাগারই বন্ধ করে দেওয়া হল কেন সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌরের দাবি, হাসপাতাল চত্বরে রাতভর পুলিশের নজরদারি রয়েছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।

রয়েছে নিরাপত্তার প্রশ্নও। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত চিকিত্সাধীন রোগীদের নজরদারি ও তাঁদের নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালের ভিতরে একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। ওই ক্যাম্পে ৬ জন পুলিশকর্মী থাকেন! তবে তাঁরা হাসপাতালের বাইরে নজরদারি চালান না। ফলে চিকিৎসার জন্য টাকা নিয়ে এসেও রোগীদের পরিজনদের চুরি ও ছিনতাইয়ের আশঙ্কা নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে শুয়ে বসে রাত কাটাতে হয়। স্ত্রীকে ভর্তি করে হাসপাতালের বাইরে রাত জাগতে জাগতে গৌরি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রী সনাতন সরকার বললেন, ‘‘পুরসভার ভবনে জায়গা না পাওয়ায় হাসপাতাল চত্বরে বসে কখনও জেগে কখনও ঘুমিয়ে রাত কাটাচ্ছি। তাছাড়া ওই ভবনটি হাসপাতাল ভবন থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় আপদ বিপদে স্ত্রীর কাছে আসতে পারব কি না চিন্তা করে সেখানে থাকার উত্সাহ হারিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন