কোচবিহারে ধরলা নদীর ভাঙন। ছবি: হিমাংশু রঞ্জন দেব।
কারও বসতবাড়ি গিয়েছে। কেউ কৃষি জমি হারিয়ে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। পঞ্চায়েতের হিসেব অনুযায়ী গত সাতদিনে অন্তত ২৫টি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে নদী গর্ভে। নদীর গ্রাসে গিয়েছে কয়েকশো বিঘা চাষের জমিও। কোচবিহারের গীতালদহের ধরলা নদী সংলগ্ন বড়াইবারি, বাঁধের কুঠি, ঘোষপাড়া- সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা এখন নদী ভাঙনের জেরে আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
এলাকার অবস্থা খতিয়ে দেখতে শুক্রবারই ওই অঞ্চলে যায় প্রশাসনের একটি দল। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে ওই এলাকায় ভাঙন রুখতে সেচ দফতরের কাছে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। দিনহাটার মহকুমাশাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ বলেন, “গীতালদহের ওই এলাকাটি ভাঙনপ্রবণ। নদীর ভাঙন কীভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে সেচ দফতরকে প্রকল্প বানাতে বলা হয়েছে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই এলাকায় নদী ভাঙন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। প্রতিবছরই ভাঙনের ফলে বহু মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। কৃষিজমি হারিয়ে দিনমজুরির কাজ করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। এবারেও বর্ষা শুরু হতেই ভাঙন শুরু হয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা মিন্টু বর্মন জানান, তাঁর তিন বিঘা কৃষিজমি-সহ সব ভিটেমাটি সব নদী ভেঙে নিয়ে গিয়েছে। পরিবার নিয়ে তাঁকে রাস্তায় আশ্রয় নিতে হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “নদী আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। জল বাড়তেই বুঝতে পারি এবারে অবস্থা খারাপ হবে।’’ আরেক বাসিন্দা অশোক সরকার বলেন, “আত্মীয়ের বাড়িতে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাড়ি, জমি সব নদী কেড়ে নিয়েছে। এখন দিনমজুরি করছি।” গত দশ বছর ধরে ভাঙন ব্যাপক আকার নিলেও একাধিক বার প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে জানান তাঁরা। সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বলেন, “বিষয়টি নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” গীতালদহের ২ নম্বর পঞ্চায়েত প্রধান আমিনুল হক বলেন, “অনেক বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। একটি রাস্তা ভাঙা শুরু হয়েছে।’’ প্রশাসনকে সব জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, গীতালদহে নদী ভাঙন সমস্যা রুখতে সাত বছর আগে একটি বাঁধের কাজ শুরু করা হয়। তাতে কিছু এলাকা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেলেও, এলাকার একটি বড় অংশ বাঁধের আওতার বাইরেই থেকে যায়। এর পর সেখানে ভাঙন ব্যাপক আকার নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গ্রাম সংলগ্ন ধরলা নদীর আরও দুই কিলোমিটার অংশে বাঁধ তৈরি করতে হবে। তা হলে ভাঙনের হাত থেকে গ্রামকে রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে তাঁদের ধারণা। এ ভাবে চলতে থাকলে আর কয়েক বছরে গোটা গ্রামটাই নদীতে তলিয়ে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপনকুমার সাহা বলেন, “অসংরক্ষিত এলাকায় কিছু ভাঙন হচ্ছে।’’ বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।