নির্দলের সমর্থনে বোর্ড গঠনে উদ্যোগী বামেরা

পুরবোর্ডের দখল নিতে ২৪ জন কাউন্সিলরের সমর্থনে মেয়র এবং চেয়ারম্যান পদে লড়াই-র ঘোষণা করল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিপিএমের জেলা দফতর অনিল বিশ্বাস ভবনে পুরভোটের পর ফ্রন্টের প্রথম বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ বামফ্রন্টকে সমর্থন করবেন বলে ধরে নিয়েই বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে দুই পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:০১
Share:

সাংবাদিক সম্মেলনে অশোক ভট্টাচার্য।

পুরবোর্ডের দখল নিতে ২৪ জন কাউন্সিলরের সমর্থনে মেয়র এবং চেয়ারম্যান পদে লড়াই-র ঘোষণা করল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিপিএমের জেলা দফতর অনিল বিশ্বাস ভবনে পুরভোটের পর ফ্রন্টের প্রথম বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ বামফ্রন্টকে সমর্থন করবেন বলে ধরে নিয়েই বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে দুই পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা মেয়র পদের দাবিদার অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যা খবর তাতে আজ, শুক্রবার পুরসভার পক্ষ থেকে বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। আমরাই ২৪ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে বোর্ড গঠন করব। অরবিন্দবাবুর সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে। মেয়র ও চেয়ারম্যান পদে বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই মনোনয়ন জমা করা হবে।’’

Advertisement

অশোকবাবু বলেন, ‘‘অরবিন্দবাবুর সমর্থনের চিঠি, শর্ত নানা কথা বলা হচ্ছে ঠিকই। সেগুলি সময়মত হয়ে যাবে। আর অরবিন্দবাবুর মত একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ যা চান, আমরাও ভোটে লড়াইয়ের সময় সেগুলিই বলেছি। তাই কোনও সমস্যা নেই। নতুন বোর্ডে মেয়র, চেয়ারম্যান পদ সিপিএমের হাতেই থাকছে। মেয়র পারিষদ-সহ বাকি পদগুলি মেয়র নিবার্চনের পরেই ঠিক হয়ে যাবে।’’ ফ্রন্ট সূত্রের খবর, ডেপুটি মেয়র পদে আরএসপি’র কাউন্সিলর রামভজন মাহাতো’র নামই প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে চেয়ারম্যান পদের জন্য কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রকাশ্যে প্রত্যয়ী হলেও দলের অন্দরের খবর, বামফ্রন্টের মধ্যে পদ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

বামেদের বোর্ড হচ্ছেই ধরে নিয়ে বাম নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, মেয়র ও চেয়ারম্যান নিবার্চনের পর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে। পুর কতৃর্পক্ষ তা করলে ভাল, নইলে পুর কর্মচারীদের সংগঠন তা করবে। অশোকবাবু জানান, তাঁরা ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-সহ সব দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাবেন। তিনি বলেন, ‘‘ মন্ত্রী তো বলেছেন উন্নয়ন নিয়ে তাঁরা রাজনীতি করেন না। আমরাও রাজ্য সরকার-সহ সবার সহযোগিতা নিয়েই বোর্ড চালাতে চাই।’’ ফ্রন্ট সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে শাসক ও বিরোধী দুই পক্ষের মধ্যে টেলিফোনে নানা কথাবার্তাও হয়েছে।

Advertisement

এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমরা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। সেখানে রাজনীতির তো কোনও বিষয় নেই। আর আমন্ত্রণ আগে জানাক, তখন দেখা যাবে। এখই এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। আর বামেরা বোর্ড করবে বলেছে। আমরাও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।’’

এদিন ফ্রন্টের বৈঠকের পর রাজনৈতিক সৌজন্যতাবোধের কথাও বলেছেন অশোকবাবুরা। অশোকবাবু জানান, সম্প্রতি আমাকে গ্রেফতারের দাবিতে তৃণমূলের কয়েকটি ব্যানার শহরে দেখা যায়। তার পরে আমাদের কর্মীরাও নানা মামলার উল্লে‌খ করে মন্ত্রীর গ্রেফতারের দাবিতে ব্যানার দেয়। কিন্তু এটা শহরের রাজনীতি নয়, তাই আমরা তা খুলে দিতে বলেছি।

উল্লেখ্য, সারদা-সহ একাধিক মামলার কথা বলেও সিপিএমের ওই ব্যানার মন্ত্রীর নাম লেখার পরেই গৌতমবাবু আইনি পথে যাওয়ার হুমকি দেন। এর জেরেই সিপিএমের ব্যানার সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে অশোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘এমন কোন বিষয়ই নেই। আমরা সৌজন্য বোধ দেখাচ্ছি। ওঁরা যদি এর পরেও নিজেদের ওই প্রচার চালিয়ে যায়, সেখানে তৃণমূল নেতাদেরই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।’’

এব্যাপারে মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, ‘‘রাজনৈতিক সৌজন্য আমার যথেষ্ট রয়েছে। নাট্য মেলা বা প্রয়াত আনন্দ পাঠকের স্মরণসভার জন্য নিজেদের অনুষ্ঠান বা কোনও সময় রাজনৈতিক দলকে না দেওয়ার কথা থাকলেও দীনবন্ধু মঞ্চ বামেদের দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় নানা নেতা তাঁদের সমস্যার কথা টেলিফোনে জানানোয়, আমরা তা সাধ্যমত দেখে দেওয়ার চেষ্টাও করেছি। এসব তো বামেরা মনে রাখেন, বলে মনে হয় না।’’

ফ্রন্টের এদিনের বৈঠকে আগামী মহকুমা পরিষদ নির্বাচন দ্রুত করানোর দাবিতে জেলাশাসক এবং প্রতিটি বিডিওকে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ঠিক হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার জানান, তাঁরা ভোটের মিটিং, প্রার্থী চয়ন শুরু করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সার্বিক ঐক্যের মধ্যে দিয়ে আমরা লড়ব। ১০-১১ মাস সময় চলে গিয়েছে, তৃণমূলের নির্দেশেই ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হচ্ছে না।’’ অশোকবাবু বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি পুরভোটের মডেলেই মহকুমা পরিষদে আমরা ভোট করব। সবাইকে বলব, আপনার যাঁকে পছন্দ তাকে ভোট দিন। কিন্তু ভোট কাড়ার চেষ্টা হলে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন