নজরদারি: চিতাবাঘের আতঙ্ক জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে। নিজস্ব চিত্র
শিলিগুড়ি শহরের মধ্যেই ক’দিন আগে ঢুকে এসেছিল চিতাবাঘ। এ বার জলপাইগুড়ির প্রাণকেন্দ্র কদমতলা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে চিতাবাঘ থাবা বসাল এক মহিলার ঘাড়ে। জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে চিতাবাঘের আতঙ্কে পাতা তোলা বন্ধ থাকল বৃহস্পতিবার। গতকাল বুধবার পাতা তোলার পরে চা গাছের আড়াল থেকে একটি চিতাবাঘ বেড়িয়ে মহিলা চা শ্রমিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে অন্য শ্রমিকদের দাবি। গতকাল গভীর রাতে চা বাগানের ভিতর থেকে চিতাবাঘের হুঙ্কারও শোনা গিয়েছে বলে দাবি শ্রমিকদের। সেই আতঙ্কেই আজ পাতা তোলা বন্ধ থাকল ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানে।
বৃহস্পতিবার বনকর্মীরা চা বাগানে গিয়ে চিতাবাঘের খোঁজে তল্লাশি চালায়। চা বাগানে একটি খাঁচাও পাতা হয়। আতঙ্কিত চা শ্রমিকরা রাত পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। মশাল জ্বালিয়ে সন্ধের পর থেকেই পাহারা চলছে ডেঙ্গুয়াঝাড়ে। বন দফতর থেকে বেশ কিছু পটকাও দিয়েছে চা শ্রমিকদের। বাগান সূত্রে জানানো হয়েছে, যে মহিলা শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর নাম ক্রান্তি ওঁরাও।
সেই সময় চা পাতা তুলছেন আরেক মহিলা শ্রমিক সুশীলা সাঁতাল। তিনি বলেন, “তখন পাতা তোলার কাজ প্রায় শেষ। হঠাতই দেখলাম একটি কুকুর লাফিয়ে উঠল। মুহূর্তেই বুঝতে পারলাম ওটা কুকুর নয়। সারা গায়ে হলুদ ডোরাকাটা। কিছু বোঝার আগেই ক্রান্তির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ক্রান্তি মাটিতে পরে যেতেই জন্তুটি পালিয়ে যায়।”
তারপর থেকেই বাগানে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতের বেলায় চিতাবাঘের গর্জন আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়।
চা বাগানের ম্যানেজার জীবন চন্দ্র পাণ্ডে বলেন, “শ্রমিকরা আতঙ্কে কাজে যেতে চাইছে না। সে কারণে আজ পাতা তোলা বন্ধ রাখা হয়েছে। বন দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান লাগোয়া জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন, পলিটেকনিক কলেজ এবং জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। চিতাবাঘের হামলার কথা শুনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এই এলাকাগুলিতেও।
বন দফতরের প্রাথমিক ধারণা, বৈকুন্ঠপুরের জঙ্গল থেকে চিতাবাঘটি রাতের বেলায় বের হয়ে চা বাগানে ঢুকে পড়তে পারে। বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের পরে জয়পুর এবং রায়পুর কাছাকাছি দু’টি চা বাগান রয়েছে। বাকি অংশ খেত, ফাঁকা মাঠ। রাতের বেলায় চা বাগান দিয়ে এবং খেত পার হয়ে শহর ঘেঁষা ডেঙ্গুয়াঝাড়ে চিতাবাঘের চলে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে দাবি।
বৃহস্পতিবার চা বাগান থেকে উদ্ধার হওয়া পায়ের ছাপ চিতাবাঘেরই বলে প্রমাণ পেয়েছে বন দফতর। চা বাগান ছুঁয়েই পাতকাটা, পাহাড়পুরের মতো ঘনবসতি রয়েছে। তার পাশ দিয়ে গিয়েছে ৩১ ডি জাতীয় সড়ক। রাস্তা পার হলেই জলপাইগুড়ি পুর এলাকা শুরু। সে কারণে বন দফতরও জন্তুটিকে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরেও।