শিলিগুড়ির চিঠি

বিভীষিকার অপর নাম অবশ্যই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। অন্তত এই শিলিগুড়িতে। প্লাস্টিক জিনিসটি বিজ্ঞানের একটি আশীর্বাদ। অথচ সেটাই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের আকারে আমাদের কাছে অভিশাপ হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০২:১৩
Share:

প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ হোক, চাইছেন বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

প্লাস্টিক-মুক্ত শিরোপা ধরে রাখুক শহর

Advertisement

বিভীষিকার অপর নাম অবশ্যই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। অন্তত এই শিলিগুড়িতে। প্লাস্টিক জিনিসটি বিজ্ঞানের একটি আশীর্বাদ। অথচ সেটাই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের আকারে আমাদের কাছে অভিশাপ হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে।

বিগত পুরবোর্ডের সময় বিশেষ করে তৎকালীন সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটকের উদ্যোগে শিলিগুড়ি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর বলে ঘোষণা করা হয়। রাজ্যে এমনকী, রাজ্যের বাইরেও সেই সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল বলে আমরা জানতেও পারি। শহরবাসী হিসাবে তা নিয়ে গর্ব হত। কিন্তু মাঝপথে পুরবোর্ড ভেঙে যাওয়ার পর শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতে পুরসভার সেই চেষ্টায় ভাঁটা পড়ে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ফেরাতে তৎপর হয়েছে প্লাস্টিক লবি। তাতে চুপিসাড়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে শহরের কয়েকটি এলাকায়।

Advertisement

এই তো কয়েকদিন আগের কথা। আমার বাড়ির সামনে বড় নর্দমা পরিষ্কার করছিলেন পুরসভার কর্মীরা। দেখছিলাম নর্দমা থেকে প্রচুর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ এবং ওই সমস্ত ব্যাগে ভর্তি অবর্জনা ওঠানো হচ্ছিল। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগই নর্দমার জল সরার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে ছিল। জল আটকে থাকায় সেই জায়গা মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছিল। তাই কেউ যদি বলেন, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে পরিবেশ দূষণ হয় না তাঁর সঙ্গে আমি কোনওভাবেই একমত হতে পারছি না।

এখন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের সঙ্গে নতুন উপদ্রব যোগ হয়েছে। সেটা থার্মোকল। কোনও বিয়ে বা অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়া হলেও থার্মোকলের প্লেট, প্লাস্টিকের গ্লাস ব্যবহার হচ্ছে। পরে সেটা ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সেটাই পরে গিয়ে পড়ছে নর্দমায়। শুধু শহর নয়, এই প্লেট, গ্লাস বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা, বনাঞ্চলকেও দূষিত করছে। পিকনিক করতে গিয়ে থার্মোকলের প্লেট, প্লাস্টিকের গ্লাস ব্যবহার এবং তা ফেলে আসা হচ্ছে ওই জঙ্গল লাগোয়া এলাকাতেই। তাতে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ।

আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে, গর্জে উঠতে হবে এর বিরুদ্ধে। আমার এবং আমার শহর শিলিগুড়ির ভালর জন্য। এতটুকু তো আমরা করতেই পারি যে, আমরা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ কোনও দোকানদার বা কারও থেকে নেব না। কাউকে দেব না। এই শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর থাকুক। কলকাতা, দিল্লি সেখানেই আমরা যাই না কেন গর্বের সঙ্গে যেন বলতে পারি আসুন আমাদের শহর শিলিগুড়িতে। দেখা যান কী করে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাহ মুক্ত শহর হতে পারে। তাই সদ্য গড়ে ওঠা পুর বোর্ডের কাছে আমার কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে।

১) প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বর্জনের জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা। বিভিন্ন ক্লাব, সমিতিগুলিকে নিয়ে আলোচনা করে বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব তাদের দেওয়া হোক। যাদের এলাকা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত থাকবে তাদের পুরস্কৃত করা। ২) ব্যবসায়ী সমিতি, মালিক সংগঠন, কর্মী সংগঠন গুলিতে এই চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করা। ৩) এই বিষয়টিকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা। সমস্ত ক্লাব, সমিতি, সংগঠনগুলিকে সে ব্যাপারে সচেতন করা। ৪) অরাজনৈতিক সংগঠন যেমন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন এবং তাদের মতো সংস্থাকে এই কাজে আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে সাহায্য করা। ৫) বিয়ে বা অনুষ্ঠান বাড়িতে বড় আকারের ডাম্পার দেওয়া হোক। সেখানে থার্মোকলের প্লেট, প্লাস্টিকের গ্লাস জমা করা বাধ্যতামূলক হোক। প্রয়োজনে এলাকার কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ফি দিয়ে সেই ব্যবস্থা করা হোক। কেউ রাস্তায় বা অনত্র থার্মোকলের প্লেট, প্লাস্টিকের গ্লাস ফেললে জরিমানা করা হোক। ৬) প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ কেউ কাউকে দিলে বা কেউ ব্যবহার করলে প্রয়োজনে আরও বেশি জরিমানা আদায় করা হোক। এবং কঠোর ভাবে তা লাগু করা হোক। শিলিগুড়ি ধরে রাখুক প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহরের শিরোপা।

মানস তরফদার, বিদ্যাসাগর পল্লি, শিলিগুড়ি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন