পরিজনদের দেহ নিয়ে অপেক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা বৈদ্যুতিক চুল্লি বন্ধ থাকল শিলিগুড়ির কিরণচন্দ্র শ্মশানে। যার জেরে রবিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শবদাহও বন্ধ তাকে। নাকাল হতে হয় শবযাত্রীদের। শ্মশানের দুর্ভোগ নিয়েই রাজনীতির অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ উঠেছে। হয়রানির খবর পেয়ে ডেপুটি মেয়র রামভজন মাহাতোকে শ্মশানে দুর্ভোগ চিত্র খতিয়ে দেখতে পাঠিয়েছিলেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এ দিন সন্ধ্যায় শ্মশানে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁকে ক্ষোভ জানিয়েছেন শবযাত্রীরা।
পুজোর আগে বিদ্যুতের লাইন মেরামতির জন্য এদিন সকাল থেকেই ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে আগে থেকেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো কিরণচন্দ্র শ্মশানেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে জেনারেটরে চুল্লি চালানো হচ্ছিল। যদিও, দুপুর দেড়টায় জেনারেটর বিকল হয়ে যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। জানা গিয়েছেন, সে সময়ে শ্মশানে পাঁচটি দেহ দাহ করার জন্য আনা হয়েছিল। এরপরে আরও দু’টি দেহ পৌঁছয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয় বিকেল সাড়ে চারটের পরে।
স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে এসেছিলেন সেবক রোডের বাসিন্দা নির্মল পুরী। তিনি বলেন, ‘‘দুপুর ২ টো নাগাদ এসেছি। এমনিতেই আমাদের আগে লাইনে দু’জন ছিল। তাতেই প্রায় দু’ঘন্টা সময় লাগার কথা। বিদ্যুৎ না থাকায় আরও প্রায় তিন ঘন্টা অপেক্ষা করতে হল।’’ বাবার দেহ নিয়ে এসেছিলেন ভক্তিনগরের রুদল রায়। তাঁর দাবি, ‘‘বিকল্প বিদ্যুৎ সরবারহের জন্য আরও ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল।’’
এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আগে থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া সত্বেও পুরসভার পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুরকর্তৃপক্ষ বা মেয়র পরিষেবা নিয়ে মনোযোগী নন, তাঁরা রাজনীতি করতে ব্যস্ত।’’ অন্যদিকে, মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তবে জেনারেটর খারাপের বিষয়টি দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীদের জানানোর কথা। তাদের শোকজ করা হবে। জরুরি পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটার বিষয়টি মেনে নেওয়া হবে না।’’ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনীতির পাল্টা অভিযোগ করে মেয়র বলেন, ‘‘মন্ত্রী রাজনৈতিক ফায়দা নিতে শ্মশানে গিয়েছেন। শ্মশান দেখাশোনার দায়িত্ব তো পুরসভার। আমরা সেই মতো পদক্ষেপও করেছি।’’
বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির শিলিগুড়ির জোনাল ম্যানেজার সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।’’ সমস্যার খবর পেয়ে শ্মশানে গিয়েছিলেন বামেদের সমর্থনকারী নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষও।