খুচরোয় হিমশিম পুজোর বাজার

ছেলে-মেয়েদের আবদার মেটাতে বছর খানেক ধরে লক্ষ্মীর ভাঁড়ে পয়সা জমিয়েছিলেন সবিতা হালদার। পুজোর সপ্তাহ খানেক আগে ছেলে-মেয়েদের পোশাক কেনার জন্য সেই ভাঁড় ভেঙেছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ ও শামুকতলা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

খুচরো নিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। গরিব পরিবারের ঘরের লক্ষ্মীর ভাঁড় থেকে ব্যাঙ্ক, সর্বত্রই খুচরোর ভারে নুয়ে পড়ছে।

Advertisement

ছেলে-মেয়েদের আবদার মেটাতে বছর খানেক ধরে লক্ষ্মীর ভাঁড়ে পয়সা জমিয়েছিলেন সবিতা হালদার। পুজোর সপ্তাহ খানেক আগে ছেলে-মেয়েদের পোশাক কেনার জন্য সেই ভাঁড় ভেঙেছিলেন তিনি। লক্ষ্মীর ভাঁড়ে জমানো দেড় হাজার টাকা নিয়ে ইংরেজবাজারের রথবাড়ি এলাকার একটি দোকানে যান হবিবপুরের বাসিন্দা সবিতাদেবী। এরপরেই বিপত্তি। কারণ সবিতাদেবীর কাছে সবই পাঁচ ও দশ টাকার কয়েন থাকায়, তা নিতে অস্বীকার করেন ফুটপাথের কাপড় ব্যবসায়ী। শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের তুমুল বচসা। যদিও পরে মাত্র ৫০০ টাকা খুচরো নিতে রাজি হয় ওই ব্যবসায়ী। এই বচসা এখন প্রায় রোজের ঘটনা মালদহের বিভিন্ন বাজারে।

গত দু’মাসে যা খুচরো জমা পড়েছে সেটা সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে শামুকতলা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের কর্মীদেরও। ব্যাঙ্ক খুচরো জমা নিচ্ছে। গ্রাহকরা তা নিতে আপত্তি করছেন। এতে ব্যাঙ্কে রীতিমতো খুচরোর পাহাড় জমেছে। আর সেই খুচরো গুছিয়ে রাখতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে কর্মীদের।এই নিয়ে চিন্তায় ব্যাঙ্ক কর্তারা।তবে গ্রাহকরা খুচরো না নিলে আর কতদিন এভাবে খুচরো জমা নেওয়া যাবে সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এই ব্যাঙ্কে খুচরো জমা দিচ্ছেন মূলত ব্যবসায়ীরা। অন্য গ্রাহকরা যখন টাকা তুলতে আসছেন, তখন সবাইকে একশো থেকে দু’শো টাকা করে খুচরো দেওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু এখন খুচরো নিতে অস্বীকার করছেন গ্রাহকরা এতে সমস্যায় পড়েছে ব্যাঙ্ক। ম্যানেজার অভ্রজ্যোতি ঘোষ জানালেন, ব্যাঙ্কে প্রচুর খুচরো জমে গিয়েছে। তবে শামুকতলা ব্যবসায়ী সমিতির মানিক দে, কমল পাল, গৌরাঙ্গ দেবনাথরা বলেন, ম্যানেজারবাবুকে খুচরোর সমস্যার কথা জানানোর পর তিনি যে ভাবে সমস্যা মেটাতে এগিয়ে এসেছেন, তাতে তাঁরা খুশি। এর জন্য ব্যাঙ্ককে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেটা অবশ্যই তাঁরা দেখবেন।

শুধু ব্যাঙ্ক ও কাপড়ের দোকানই নয়, আনাজ, মাছ এবং পাড়ার মুদির দোকানেও কার্যত অচল এক, দুই কিংবা পাঁচ টাকার কয়েন। অনেক সময় একাধিক দশ টাকার কয়েন নিতেও আপত্তি করছেন ত্রেতা-বিক্রেতারা। রথবাড়ি খুচরোর সমস্যা খুব বেড়ে গেলে ১০০ টাকার খুচরোয় ১১০ টাকা দেওয়া হত। তবে এখন খুচরোর সংখ্যা খুব বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা বেড়ে গিয়েছে। মালদহ জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মুখেই বলছে খুচরো নিচ্ছি। আসলে নিচ্ছে না। সব থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছে ছোট ব্যবসায়ীরা।” প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সুরাহা না হওয়ায় আগামী দিনে ফের পথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

মালদহের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রবীন্দ্র গুপ্তা বলেন, ‘‘পরিদর্শন করে দেখা গিয়েছে ব্যাঙ্ক গুলি খুচরো নিচ্ছে। আর খুচরো পয়সা বাজারে হাত বদল হবে”। সমস্যা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন