ভোটাধিকার আমাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার এটা মূল কাঠামো। আমরা যাতে সাংবিধানিক অধিকার পেয়ে থাকি তার জন্য জনপ্রতিনিধিদের ভোট দিই। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখি সে সব অধিকার থেকে বেশির ভাগ সময়ই আমরা বঞ্চিত। আশা আকাঙ্ক্ষা অন্ধকারেই থেকে যায়। দীর্ঘ দিন ধরেই কেন্দ্র হোক বা রাজ্য, কোনও সরকারই তরাইয়ের সংখ্যালঘু প্রাচীন ধীমাল জনজাতির পাশে সহানুভূতি নিয়ে এসে দাঁড়ায়নি। ফলে এই জনজাতির ভাষা, সংস্কৃতি সব হারিয়ে যেতে বসেছে। যে সরকারই আসুক না কেন আমাদের জনজাতির ভাষা-সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা প্রয়োজন। নিরপেক্ষ সরকার চাই।
এক জন শিক্ষক হিসেবে বলব, শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। প্রাইমারি স্কুলগুলোর অবস্থা শোচনীয়। ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাপ্রণালীর সমকক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো দরকার। বিভিন্ন দলের জনপ্রতিনিধিদের ছেলেমেয়েরা সরকারি স্কুলে পড়ে না বললেই চলে। তাঁদের ছেলেমেয়েদের এই সরকারি স্কুলগুলোয় পড়ানো বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন, তাতে সরকারি স্কুলেরও মানোন্নয়ন ঘটবে বলে আমি মনে করি। কৃষকেরা ফসলের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না, যাতে তাঁরা নায্যমূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারেন, সে দিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুকল্যাণ, মহিলাদের নিরাপত্তার কথাও সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখতে হবে।
ধীমাল জনজাতির স্বীকৃতি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকারটুকু পাওয়ার জন্য আমাদের বারবার আবেদন নিবেদন করতে হচ্ছে কেন্দ্র সরকারে কাছে।
ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার সুপারিশ করলেও কেন্দ্র সরকার স্বীকৃতি দিতে বিলম্ব করছে। নয়া দিল্লির রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া ধীমালদের বহিরাগত বলে চিহ্নিত করেছে। আমাদের স্বীকৃতিকে বারবার এ ভাবে বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে, অথচ আমরা ভারতেরই সুপ্রাচীন জাতি। গ্রামের ছেলেমেয়েদের কারিগরি শিক্ষার সুযোগ সরকারকে করে দিতে হবে। আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামেগঞ্জে কুটীর শিল্প গড়ে তোলার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে
দিতে হবে।
সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স নেই। মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। যে সরকারই আসুক তাদের এগুলিকে আগ্রাধিকার দিতে হবে। গ্রামে উন্নত মানের রাস্তা তৈরি হওয়া দরকার। গ্রামীণ লোকশিল্পীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ধীমাল লোকশিল্পীরা আজও ভাতা পাননি। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানগুলিতে তাঁরা আমন্ত্রণ পান না, উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছেন। পাশাপাশি দূরদর্শনেও নিয়মিত গ্রামীণ শিল্পীদের তুলে ধরার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে হবে।
লেখক: শিক্ষক, ধীমাল সমাজকর্মী
অনুলিখন: অনিতা দত্ত