কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার মতে, এ কথা সত্যি যে, গনি খানের নাম মালদহে এখনও জাদুর মতো কাজ করে। —ফাইল চিত্র।
গনি খানের নামের মোহ থেকে কেন বেরোতে পারছে না মালদহের রাজনীতি, সেই প্রশ্নই এ বার উঠতে শুরু করেছে। কংগ্রেস তো বটেই, তৃণমূলও মালদহে প্রার্তী করার সময় গনি খানের পরিবারের দিকেই তাকিয়ে থাকে। এ বার জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের তিন জন প্রার্থীই কোতোয়ালি পরিবারের।
কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতার মতে, এ কথা সত্যি যে, গনি খানের নাম মালদহে এখনও জাদুর মতো কাজ করে। এখনও মানুষ গনি খানের কথা ভোলেননি, তাঁকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু শুধু তাঁর পরিবারের থেকেই প্রার্থী বাছাই করাটি মোটেই ভাল বার্তা নয়। তিনি বলেন, ‘‘নবীন প্রজন্মের ভোটাররা মনে করছেন, কংগ্রেস কোনও কাজই করে না, কেবল গনি খানের নাম ভাঙিয়ে ভোট পেতে চায়। অন্য কাউকে প্রার্থী করলে, সেই দুর্নাম কাটবে।’’ তাঁর মতো আর এক নেতার দাবি, পরিবারটিও তো ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে। একজন কেউ দাঁড়ালেন, তাঁর পাশে পরিবারের অন্যরা রইলেন, সে এক কথা। কিন্তু এখন তো মৌসম বেনজির নুরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন তাঁরই খুড়তুতো ভাই ইশা খান।
এই ইশাই মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোট দেওয়া, পঞ্চায়েত নির্বাচনই হোক কিংবা বিধানসভা, সব সময়ই মৌসমের সঙ্গে থেকেছেন। যেন ছায়াসঙ্গী ছিলেন মৌসমের। এ বার উত্তর মালদহ কেন্দ্রে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তৃণমূল থেকে লড়ছেন মৌসম। আর ইশা খান লড়ছেন কংগ্রেসের টিকিটে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গনিখান চৌধুরীর বোন রুবি নুরের মেয়ে মৌসম। রুবি নুরের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে হাতে খড়ি হয় মৌসমের। প্রথমে সুজাপুরের বিধায়ক ছিলেন তিনি। তারপরে ২০০৯ সালে উত্তর মালদহের প্রার্থী হয়ে সাংসদ হন মৌসম। ২০১৪ সালেও কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। মৌসমের আরও এক সাংসদ মামা আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু) ছেলে ইশা খান চৌধুরী। তিনি ২০১১ সালে বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে বৈষ্ণবনগরের পরিবর্তে সুজাপুর থেকে প্রার্থী হন ইশা খান। ওই বছর সুজাপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন তাঁর জেঠু আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু)। যদিও লেবুবাবু ইশার কাছে হেরে গিয়েছিলেন।
ইশা বলেন, “আমি মৌসমকে ছেড়ে যাইনি। মৌসম কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন। আর দলের নির্দেশে আমি প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি উত্তর মালদহের মানুষ দেখিয়ে দিবেন তাঁরা ব্যক্তির সঙ্গে না, দলের সঙ্গে রয়েছেন।” মৌসম বলেন, “মানুষের জন্য কাজ করেছি। আর কাজের জন্যই দলবদল করেছি। উত্তর মালদহের মানুষ তা ভাল করেই বুঝতে পারছেন।”
মৌসম জোরকদমে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। উত্তর মালদহের দু’বারের সাংসদ হওয়ায় এলাকা হাতের তালুর মতো চেনা তাঁর। প্রচারে পিছিয়ে নেই ইশাও। যদিও দক্ষিণ মালদহ থেকে উত্তর মালদহ কেন্দ্রের প্রার্থী হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁকে। তাই নিয়ম করে ব্লকে ব্লকে ছুটছেন তিনি। জেলার রাজনীতিতে এখন চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে উত্তর মালদহ আসন নিয়েই।