দেশ হারিয়ে ঠিকানার খোঁজে কিশোর রায়হান

আড়াই বছর আগে বাংলাদেশি কিশোর মহম্মদ রাহয়ান এ দেশে চলে আসে। রায়হান জানায়, মৈত্রী এক্সপ্রেসে উঠে অজান্তেই সীমানা পার হয়ে গেদে স্টেশনে পৌঁছয় সে।  তারপর নানা জায়গা ঘুরে সে পৌঁছয় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। এর পর পুলিশের মাধ্যমে কোরক হোমে

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০৪
Share:

অপেক্ষা: মহম্মদ রায়হান

দেবেশ রায় ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’-এ লিখেছিলেন তিস্তা নদী চরে, জমি-ভিটে খুইয়ে ফেলা কিছু অসহায় মানুষের কাহিনি। চরের বাসিন্দা বাঘারু ছিল দেবেশবাবুর উপন্যাসের নায়ক। উপন্যাসের কথক বলেছিলেন, বাঘারুর কোনও দেশ নেই। তিস্তা পারের শহর জলপাইগুড়ির সরকারি কোরক হোমে, তেমনই নিজের দেশ খুঁজে চলেছে কিশোর রায়হান। দেশ হারিয়ে সেও আজ অসহায়।

Advertisement

আড়াই বছর আগে বাংলাদেশি কিশোর মহম্মদ রাহয়ান এ দেশে চলে আসে। রায়হান জানায়, মৈত্রী এক্সপ্রেসে উঠে অজান্তেই সীমানা পার হয়ে গেদে স্টেশনে পৌঁছয় সে। তারপর নানা জায়গা ঘুরে সে পৌঁছয় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। এর পর পুলিশের মাধ্যমে কোরক হোমে। হোমের সুপার দেবব্রত দেবনাথ বলেন, “বাংলাদেশের শিশু-কিশোররা পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া এ দেশে চলে এলে, তাদের সরকারি হোমে রাখা হয়। বাংলাদেশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সকলে ফিরিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু রায়হানের ফাইল ফেরত চলে এসেছে। ওর ঠিকানা যাচাই হয়নি।”

আঠারো ছুঁইছুঁই কিশোরটি জানে, এটা ওর দেশ নয়। তবুও গত দু’বছরের মতো এ বারও সে হোমে স্বাধীনতা দিবস পালন করবে। সোমবার সে বলল, “এ দেশে তো ভুল করে এসেছিলাম। আমার দেশে নাকি আমার ঠিকানাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন তা হলে আমার কোনও দেশ নেই।” রায়হান জানায় ময়মনসিংহের জামালপুরে তার বাড়ি। বাবা-মায়ের নামও বলেছে। তবু কোনও খোঁজ মেলেনি। রায়হান বলে, “আমার বাবা তো আগেই মারা গিয়েছিল। অভাবের সংসার ছিল। মা হয়তো পুরনো বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও ভাইদের নিয়ে চলে গিয়েছে। তাই আমার ঠিকানাও হারিয়ে গিয়েছে।” হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রায়হানের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।

Advertisement

হোমের প্রকাশ হতে চলা পত্রিকায় রায়হান লিখেছে, “আমার দেশকে খুব মনে পড়ে, এখানে একা কাঁদি।...সবার কাছে আমার আবেদন আমাকে তাড়াতাড়ি দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন।”

কবে ডাক আসবে দেশ থেকে, অপেক্ষায় রয়েছে রায়হান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন