Malda Murder

আমার মেয়ে, বললেন মা! স্বামীর দাবি কি তা হলে অসত্য? মালদহে তরুণীর দেহ ঘিরে রহস্য বাড়ল

সোমবার দিনভর বিস্তর টানাপড়েনের পর অবশেষে সেই দেহ শনাক্ত করলেন তরুণীর মা ও বোন। এতে খানিক হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তদন্তকারীরা!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ২০:২৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

মুখ পোড়ানো হয়েছে। সারা শরীরেও একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ক্ষত। পাকা রাস্তার ধারে পড়ে ছিল দেহটি। রবিবার সকালে বিহার লাগোয়া মালদহের একটি ব্লকে অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধারে রহস্য দানা বেঁধেছিল। সোমবার দিনভর বিস্তর টানাপড়েনের পর অবশেষে সেই দেহ শনাক্ত করলেন তরুণীর মা ও বোন। এতে খানিক হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তদন্তকারীরা! তবে আরও নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিল জেলা পুলিশ প্রশাসন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে নমুনা সংগ্রহও হয়। জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহিলার মৃত্যু রহস্য তদন্তের জন্য এসডিপিওর নেতৃত্বে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।’’

Advertisement

মহিলার দেহ উদ্ধারের তদন্তে নেমে সোমবারই চাঁচল থানা এলাকার এক বধূর নিখোঁজ হওয়ার কথা জানতে পেরেছিল পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, সেই নিখোঁজ বধূর পরিবারকে উদ্ধার হওয়া দেহ শনাক্তকরণের জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু দেহ দেখে বধূর স্বামী জানিয়েছিলেন, ওই মহিলা তাঁর স্ত্রী নন। ঠিক তার কিছু পরেই নিখোঁজ বধূর বাপের বাড়ির পরিবার ওই দেহ শনাক্ত করে। মা ও বোন দু’জনেই দেহ চিনতে পারায় এখন তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, দেহ শনাক্তকরণে এসে অসত্য কথা বলেছেন স্বামী! আবার তদন্তকারীদের অন্য একটি অংশের মত, মহিলার মুখ পুড়ে যাওয়ায় হয়তো সত্যিই চেনা সম্ভব হয়নি। তবে স্বামীর বয়ান যে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, তা অবশ্য সকলেই মেনে নিচ্ছেন।

নিজেকে মৃতার বোন বলে যিনি দাবি করেছেন, দেহ শনাক্তকরণের পর জানান, তিনি দিদিকে চিনতে পেরেছেন। দিদির হাতে ও পেটে দাগ ছিল। তা দেখেই চিনেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘জামাইবাবু কেন দিদিকে চিনতে পারল না, তা জানি না।’’ মা-ও জানান, অনেক দিন ধরে শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সঙ্গে তাঁর মেয়ের গন্ডগোল চলছিল। তার মধ্যেই নিখোঁজ হয়ে যান মেয়ে।

Advertisement

বিহারঘেঁষা এলাকায় তরুণীর দেহ উদ্ধার হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের একাংশ মনে করেছিলেন, ওই তরুণী পড়শি রাজ্যের বাসিন্দা হতে পারেন। সেই মতো জেলার বিভিন্ন থানার পাশাপাশি বিহারের পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয়। পরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, চাঁচল থানা এলাকার এক বধূ গত পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া তরুণীর মুখচ্ছবি এবং তাঁর পরনে থাকা কাপড় নিয়ে নিখোঁজ বধূর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হয়। সেখানে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই কাপড় নিখোঁজ বধূর হলেও হতে পারে। সেই মতো পরিবারের লোককে দেহ শনাক্তকরণের জন্য ডাকা হয়েছিল। পরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ওই বধূর স্বামী যান। সেখানে তিনি তদন্তকারীদের জানান, ওই দেহ কার, তিনি তা জানেন না।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরে নিখোঁজ বধূর শ্বশুরবাড়ি ও বাপের বাড়ি দুই পরিবারের সঙ্গেই কথা বলা হয়। শ্বশুরবাড়ি দাবি, দিন কয়েক আগে বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন বধূ। অন্য দিকে বাপের বাড়ির পরিবারের দাবি করেছে, মেয়ে তাদের বাড়িতে আসেননি। স্বামীর কাছেই রয়েছেন। সেই বাপের বাড়ির পরিবারই এসে দেহ শনাক্তকরণের পর দাবি করেছে, স্বামী অসত্য বলেছেন।

রবিবার সকালে পাকা রাস্তার পাশে তরুণীর দেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। রাস্তায় চাপ চাপ রক্ত পড়েছিল। দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয় গর্ভনিরোধক প্যাকেট, লঙ্কার প্যাকেট ও একটি ছুরি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ, যুবতীকে গণধর্ষণের পর খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। অ্যাসিড দিয়ে বা শুকনো খড় জ্বেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তরুণীর মুখ। যে ভাবে তরুণীর মুখ পুড়িয়ে, ছুরি দিয়ে কোপানো হয়েছে, তাতে পুরনো আক্রোশ বা অন্য কারণ থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের একাংশ মনে করছেন, তাঁদের বিভ্রান্ত করতেই দেহের পাশে গর্ভনিরোধকের প্যাকেট রেখে দেওয়া হয়েছিল। কেউ যাতে চিনতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই বিকৃত করা হয়েছিল মুখ। তবে অ্যাসিড দিয়ে নয়। অন্য কোনও তরল পদার্থ দিয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তেই তা স্পষ্ট হবে। পাশাপাশিই পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পরেও দেহটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। দেহটি মালদহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গেই থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন