হেঁসেলে উঁকি দিদির

বৃহস্পতিবার সকাল তখন দশটা। মালঙ্গি লজ থেকে আচমকা বেরিয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। চিলপাতার জঙ্গলের রাস্তা ধরে তাঁর গাড়ি ছুটতে থাকে। পড়িমড়ি করে দেহরক্ষীরা তাঁর গাড়ির পিছু নেন।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ ও নারায়ণ দে

কোদালবস্তি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৩
Share:

সুরক্ষা: আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: নারায়ণ দে

দিন দু’য়েক আগে নকশালবাড়ির গীতা মাহালির বাড়িতে পাত পেড়ে ভাত খেয়েছিলেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাত পাড়লেন না, কিন্তু তিনি বনবস্তির বাসিন্দাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কাউকে জড়িয়ে ধরলেন। কারও কাছে হাঁড়ির খবর নিলেন।

Advertisement

অঞ্জলি রাভা এ দিন সবে ভাতটা চাপিয়েছেন। হঠাৎ দরজার দিক থেকে ভেসে এল প্রশ্ন—‘‘আজ কী রান্না হচ্ছে?’’

দরজার পাল্লা খোলা ছিল। দিনমজুর পরিবারের বধূ অঞ্জলি তাকিয়ে দেখেন, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। অঞ্চলি প্রথমে বুঝতেই পারেননি কী করবেন। কোনওমতে তারপরে বলেন, ‘‘ভাত ডাল আলুসেদ্ধ।’’

Advertisement

মোটামুটি এই তাঁদের রোজকার খাওয়া। তাঁর স্বামী রঞ্জিত রাভা গাড়ি চালক। চারপাশে ঘন বনের মধ্যে তাঁদের বাড়ি। বড় রাস্তা থেকে নেমে সেই বাড়িতেই চলে যান মমতা।

ঘন বনের মধ্যে এই বনবস্তিতে সাড়ে তিনশো পরিবারের বাস। তার মধ্যে দু’শোটি রাভা পরিবার। বেশির ভাগই দিনমজুর। অনেকের বনের কাঠ কেটে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল তখন দশটা। মালঙ্গি লজ থেকে আচমকা বেরিয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। চিলপাতার জঙ্গলের রাস্তা ধরে তাঁর গাড়ি ছুটতে থাকে। পড়িমড়ি করে দেহরক্ষীরা তাঁর গাড়ির পিছু নেন। কোনও পাইলট ভ্যান বা স্থানীয় পুলিশদের কেউই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন না। প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে কোদালবস্তির দিকে হাটঁতে শুরু করেন তিনি।

তখনই রাস্তার ধারে লোক জমতে থাকে। কারও দিকে তাকিয়ে হাত তুলছেন তিনি। আবার কাউকে দেখে হাসি মুখে কথাও বলতে শুরু করেন। এরপরেই পাকা সড়কের পাশে রবিরাম রাভার বাড়িতে ঢুকে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়ে রবিরাম কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

মুখ্যমন্ত্রী তখন রবিরামকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘পরিবারের লোকজন কোথায়?’’

রবিরামের জবাব, ‘‘আপনার সভা দেখতেই সকলে গিয়েছেন।’’

মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘কাঠের তৈরি উঁচু প্লাঙ্কিং করা ঘর কেন?’’

রবিরামের উত্তর, ‘‘হাতির উপদ্রব থেকে বাঁচতে ঘরগুলি উঁচু করে বানানো হয়েছে দিদি।’’

এরপরে মমতা যান চরণির রাভার বাড়িতে। হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীকে বাড়ির উঠোনে দেখে ঘাবড়ে যান চরণিও। তাঁরা কেমন আছেন, জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। কোনও সমস্যা রয়েছে কি না তাও শোনেন। চরণির স্কুল পড়ুয়া এক ছেলে নিশু দিন কয়েক আগে ফুটবল খেলতে গিয়ে মাথায় চোট পায়। ছেলের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় ছিল পরিবার। মুখ্যমন্ত্রীকে সে কথা জানান চরণি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে আশ্বস্ত করে জানিয়ে দেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি যেন আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে যান। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানো হবে।

রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা স্কুল পড়ুয়াদের ভাল করে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে বনবস্তির বাসিন্দাদের কাছে আবেদন করেন, এই জায়গাকে শুধু মাত্র কোদালবস্তি নয় যেন বনছায়াও বলা হয়। বনবস্তির নতুন নাম পেয়ে খুশি বাসিন্দারা। বীর রাভা, রণজিৎ রাভারা বলে, “আমরা গাছের ছায়ার নীচেই থাকি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া বনছায়া নাম আমাদের ভালোই লেগেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন