আলোচনা: নিজের বাড়িতে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস (একেবারে বাঁ দিকে)। শুক্রবার কলকাতার কালীঘাটে। নিজস্ব চিত্র
উত্তরবঙ্গে হারের রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে তৃণমূলের বৈঠকে। সেই ধাক্কায় গত শনিবারের বৈঠকে দায়িত্বে বেশ কিছু রদবদল করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন দলের উপরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে গুরুত্ব দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছিল কোনও কোনও জেলা সভাপতিকে। এই শুক্রবারও সেই ধারা বজায় রইল। উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা এক প্রথম সারির নেতাকে কড়া ভাষায় ধমক দিলেন মমতা। প্রশ্ন করলেন, ‘‘যা চাওয়া হয়েছে, সবই দিয়েছি। তা হলে এমন ফল হল কেন?’’ একই সঙ্গে ধমক খেলেন সদ্য জেলা সভাপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত আর এক নেতা।
তবে ধমক দিলেও সদ্য দেওয়া দায়িত্ব বহাল রেখেছেন মমতা। তাই গত শনিবারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে উত্তরবঙ্গে অরূপ বিশ্বাসের পুরনো দায়িত্বই বহাল রইল। দক্ষিণ দিনাজপুরে জেলা সভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন অর্পিতা ঘোষ। আগের বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর মালদহের দায়িত্ব নিতে চান না। এ দিন তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাধন পাণ্ডে এবং গোলাম রব্বানিকে।
দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ার জেলার দায়িত্বে ছিলেন অরূপ বিশ্বাস। দু’টি আসনই তৃণমূল হেরেছে। শুধু পাহাড়েই নয়, সমতলের চার বিধানসভার তিনটিতেও বিজেপি পিছনে ফেলে দেয় তৃণমূলকে। দার্জিলিং যদিও তৃণমূলের দখলে ছিল না, তবু ২০১৭ সালে গোলমালের পরে পাহাড়ে যে পালাবদল হয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও আশা দেখেছিল ঘাসফুল শিবির। বিমল গুরুংয়ের দীর্ঘদিন পাহাড় থেকে দূরে থাকাও ভোটে তাদের দিকে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেছিল তৃণমূল শিবির। কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সব ক্ষেত্রেই উল্টো ফল হয়েছে। বিনয় তামাং, অনীত থাপাদের ক্ষমতায়ন কোনও কাজেই লাগেনি। বিনয়কে গুরুং ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে দেগে দিয়েছিলেন। ভোটবাক্সে দেখা গেল, গুরুংয়ের কথাতেই সায় দিয়েছেন বেশির ভাগ পাহাড়বাসী।
আলিপুরদুয়ার আসনটি ২০১৪ সালে তৃণমূলই জিতেছিল। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে চা বলয়ের সেই গড় যে নড়বড় করছে, বিভিন্ন ভোটে তা বারবার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এমনকি, যে পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল, সেই ভোটেও আলিপুরদুয়ারে ভাল ফল করে বিজেপি। লোকসভা ভোটের ফল বেরনোর পরে এই এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সব কিছু জানা সত্ত্বেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কেন আগে থেকে ব্যবস্থা নেননি? এ দিনের বৈঠকে জেলা ধরে আলোচনার সময়ে বারবার এই প্রসঙ্গগুলিই উঠে এসেছে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে। একসময়ে মমতা প্রশ্ন করেছেন, ‘‘যখন যা চাওয়া হয়েছে, সবই তো দিয়েছি। তা হলে এমন ফল হল কেন?’’ দলীয় সূত্রে দাবি, সেই সময়ে কার্যত চুপ করেই বসেছিলেন অরূপ।
বিষয়টি নিয়ে পরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউই মুখ খুলতে চাননি। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবও এ দিন কালীঘাটের বৈঠকে ছিলেন। তিনিও বলেন, ‘‘দলের নির্দেশই শেষ কথা। এই নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’’ বৈঠকে হাজির ছিলেন দার্জিলিঙের প্রাক্তন বিধায়ক অমর সিংহ রাই। পরে তিনি বলেন, ‘‘কেন ফল খারাপ হল, জিজ্ঞেস করেছেন দলনেত্রী। যতটুকু বলার, বলেছি। বাকিটা পাহাড় নিয়ে আলাদা বৈঠক হলে বলব।’’ বিনয়পন্থী মোর্চার নেতা অনীত থাপা বলেন, ‘‘হারের কারণ নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করেছি। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করব।’’