প্রেমের টানে পাল্টেছিলেন ধর্ম। নতুন করে ‘ভোটার কার্ড’ করেছিলেন। দুই পরিচয়পত্র নিয়ে কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্তের গ্রাম করলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন মুম্বইয়ের এক যুবক। শনিবার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় ওই যুবককে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য পেয়ে হতবাক তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা।
প্রথমটায় মনে করা হয়েছিল, ওই যুবক কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। পরিচয় গোপন করতেই তিনি একাধিক পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “ওই ঘটনার তদন্ত চলছে।” জেলার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “আমাদের হাতে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে প্রেমিকাকে বিয়ে করতেই ধর্ম পাল্টান তিনি। সেই সুত্রেই নতুন পরিচয় পত্র তৈরি করা হয়।”
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মুম্বইয়ের এক ফুটপাথেই বড় হয়েছেন ওই যুবক। নিজের জন্ম পরিচয় তাঁর জানা নেই। সেখানেই একটি হোটেলে কাজ করতেন তিনি। পরে বাসের খালাসি হিসেবে কাজ করতে থাকেন। বাসের এক মালিকের পরিচয়েই তিনি সেখানে পরিচয়পত্র তৈরি করেন। সেই নামেই এলাকায় পরিচিত হয়ে যান তিনি।
কাজের সূত্রেই পরিচয় কোচবিহারের বলরামপুরের এক যুবকের সঙ্গে। দীর্ঘ দিন এক সঙ্গে কাজ করতে করতে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। সেই বন্ধুর সঙ্গেই বলরামপুরে এসে এক তরুণীর প্রেমে পড়ে যায় ওই যুবক। তরুণীকে বিয়ে করার জন্য তাঁর বাড়ির সঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি। বাধা হয় দাঁড়ায় ধর্ম। পরে ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে করেন তিনি। তরুণীর বাবার পরিচয় ধরেই নতুন ‘পরিচয়পত্র’ বের করেন তিনি। সেই ‘পরিচয়পত্র’ নিয়েই তিনি মুম্বই-কোচবিহার যাতায়াত করতে থাকেন। তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, কাজের জন্য মুম্বই থাকতেন ওই যুবক। মাঝে মাঝে স্ত্রীকে নিয়ে বলরামপুরেও দীর্ঘ সময় কাটাতেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, দিন কয়েক আগেই মুম্বই থেকে কোচবিহারে ফেরেন ওই যুবক। তাঁর স্ত্রীর এক আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তের গ্রাম করলায়। সেখানে গিয়েই বিএসএফের হাতে পড়েন ওই যুবক। সে সময় তাঁর কাছে একটি ভোটার কার্ড, একটি আধার কার্ড এবং একটি প্যানকার্ড ছিল। তাতে দুই পরিচয় ছিল তাঁর। বিএসএফের জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন উত্তর দিতে দেখে তাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ দিনহাটা আদালতের নির্দেশে ওই যুবককে সাত দিনের হেফাজতে নিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদেই উঠে এসেছে এমন তথ্য। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “ভয়ে কিছু অসংলগ্ন কথা বলেছে ওই যুবক। পরে তদন্তে উঠে এসেছে ওই ঘটনা।”
যদিও পুলিশের এক কর্তারই কথায়, এই যুবক যদি আইন মেনে পরিচয়পত্রটি সংশোধন করে নিতেন, তা হলে গোলমালে পড়তে হত না।