ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি চলছেই হবিবপুরের গ্রামে

মৃত্যুতে বন্ধ মার

পাঁচ দিনের ব্যবধানে মালদহের হবিবপুরে ছেলে ধরা সন্দেহে চারটি গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। তার মধ্যে বুধবারের ঘটনায় একজনের মৃত্যু সেই চিন্তা বাড়িয়েছে। 

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ০২:১৬
Share:

নির্যাতিত: বেঁধে রেখে তখনও মার থামেনি ওই ব্যক্তির উপরে। বুলবুলচণ্ডীতে। নিজস্ব চিত্র

পাঁচ দিনের ব্যবধানে মালদহের হবিবপুরে ছেলে ধরা সন্দেহে চারটি গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। তার মধ্যে বুধবারের ঘটনায় একজনের মৃত্যু সেই চিন্তা বাড়িয়েছে।

Advertisement

বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ হবিবপুরে বুলবুলচণ্ডীর ডুবাপাড়া গ্রামে। অভিযোগ, ছেলে ধরা সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে অর্ধনগ্ন করে ফুটবলের বার পোস্টে বেঁধে মারধর করে গ্রামবাসীদের একাংশ। পুলিশের সামনেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ভর্তি করে বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ওই ব্যক্তিকে গ্রামে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। গ্রামবাসীদের প্রশ্নে ওই ব্যক্তি সদুত্তর দিতে না পারায় তাঁকে ধরা হয়। শুরু হয় বেধড়ক মারধর।

Advertisement

মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। ওই ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ছাড়া মাইকিং করে সাধারন মানুষকে এ ধরনের ঘটনা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।’’ হবিবপুরের বিডিও শুভজিৎ জানা জানান, বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে। পুলিশকে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনার মোবাইলের ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে। তা পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

প্রশাসনের কয়েক জন আধিকারিক জানান, পিছিয়ে পড়া সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা কোথা থেকে আসছে তা জানা দরকার। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ নির্মল বেরা জানান, ‘‘এর পিছনে কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। পিছিয়ে পড়া, শিক্ষার অভাব রয়েছে এমন জায়গায় এ সব ঘটছে। পুলিশকে, প্রশাসনকে সজাগ হতে হবে।’’ পুলিশের দাবি, ছেলে ধরার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গোলমাল পাকাতে চাইছে কি না, পুলিশ তা-ও খতিয়ে দেখছে।

চারটি ঘটনাই ঘটেছে হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী এবং আইহোতে। বাসিন্দাদের দাবি, প্রথম ঘটনার পরেই পুলিশের উচিত ছিল কড়া পদক্ষেপ করা। পুলিশ প্রশাসনের দাবি, গ্রামবাসীদের সচেতন করতে মাইকিং করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

মালদহ শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হবিবপুর ব্লক। ওই ব্লকের প্রাণকেন্দ্র আইহো এবং বুলবুলচন্ডী গ্রাম পঞ্চায়েত। এ দিন যাদের ধরা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বোঝায় চেষ্টা করছে পুলিশ। হবিবপুরের সিপিএমের বিধায়ক খগেন মুর্মূ বলেন, ‘‘পুলিশের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ করে গণধোলাই এর মতো ঘটনা বন্ধ করা।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রভাস চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি গ্রামের মানুষদেরও সচেতন হতে হবে। অচেনা মানুষ দেখলে মারধরের পরিবর্তে প্রশাসনকে জানাতে হবে।’’

এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্য বক্তব্য, মাত্র কয়েকজনই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। গোটা এলাকাকে দোষ দেওয়া উচিত হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন