সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি পুলিশের

গুজবে গণপিটুনি চলছে, ফের মৃত্যু

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রাজলাল শা (৩৫)। জয়গাঁ সহ একাধিক জায়গায় বেশ কিছু ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:৪২
Share:

হ্যামিল্টনগঞ্জে গণপিটুনিতে মৃত ব্যক্তি। নিজস্ব চিত্র

গণপিটুনির জেরে ফের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল আলিপুরদুয়ারে। এ বারের ঘটনা কালচিনির হ্যামিল্টনগঞ্জের। অভিযোগ, বচসার জেরে এক পুরোহিত ও তাঁর ভাইকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করে এক যুবক। পুলিশের খাতায় যে দুষ্কৃতী বলেই পরিচিত। অভিযোগ, এরপর স্থানীয়রা ওই যুবককে ধরে গণপিটুনি দিলে তার মৃত্যু হয়।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম রাজলাল শা (৩৫)। জয়গাঁ সহ একাধিক জায়গায় বেশ কিছু ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার বিকালে রাজলাল হ্যামিল্টনগঞ্জের একটি শ্মশান কালী মন্দিরের পুরোহিতের মেয়েকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চায়। তখন ওই পুরোহিত ও তাঁর ভাই বাধা দেন। অভিযোগ, তখনই আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে এসে রাজলালকে ধরে মারধর শুরু করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে রাজলালকে প্রথমে কালচিনি গ্রামীণ হাসপাতালে ও তারপর তাকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ঘটনায় জখম হয়েছে পুরোহিত ও তাঁর ভাই। তাঁদেরও আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

ছেলেধরা সন্দেহে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। জুলাইয়ের শেষে ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তারপর ফের এ দিন জেলার আরেক প্রান্তে গণপিটুনিতে এক জনের মৃত্যুর অভিযোগকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘এই ঘটনায় অভিযুক্ত দুইয়ের বেশি। তবে আগের ঘটনাগুলির মতো একে গণপিটুনি বলা যাবে না।’’ তবে একটা মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

তবে কোচবিহারে গুজব রুখতে প্রচার চলার মধ্যেই আবার তিন জনকে গণপিটুনি দেওয়া হল। তাঁদের মধ্যে জোসেফ সাঁওতাল নামে এক যুবক, শনিবার গণপিটুনি খেতে পারেন এই আশঙ্কাতেই লোক জড়ো হয়ে যাওয়ার পরে ছুটে পালাচ্ছিলেন। পালানোর সময় একটি জলাশয়ে পড়ে যান। তখনই তাঁকে ঘিরে ফেলেন দিনহাটার পুঁটিমারি চেকপোস্ট এলাকার কিছু মানুষ। তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করা শুরু হয়ে যায়। পুলিশ দ্রুত সেখানে ছুটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে। ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করে। জোসেপের বাড়ি বানারহাট এলাকায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

মাথাভাঙা হাজরাহাট ২ ব্লকের গাদলের কুটি এলাকায় দুই ব্যক্তিকে ছাগল চোর সন্দেহে মারধর করা হয়। রবিউল হোসেন ও রাজু হোসেন নামে ওই দুই ব্যক্তিকেও পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে ওই দুই ব্যক্তি মোটরবাইক করে যাওয়ার সময় এক যুবক চিৎকার করতে থাকে ‘ছাগল চোর’ বলে। এরপর এলাকাবাসীর একাংশ তাকে ধরে ফেলেন এবং মারধর করা হয়। আক্রান্তদের দাবি, তাঁরা বাইকে করে আসার সময় রাস্তার ধারে শৌচকর্ম করছিলেন। সে সময় আচমকা এক যুবক ‘ছাগল চোর’ বলে চিৎকার করতে থাকে এরপর সেখানে প্রচুর মানুষ এসে তাদের গণপিটুনি দেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই দুই যুবককে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসার পর তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়। তাঁদের পুলিশ আটক করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ঠেকাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার শুরু করল কোচবিহার জেলা পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে এলাকার মানুষকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। জাল প্রোফাইল তৈরি করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উস্কানিমূলক মন্তব্য এবং ছবি, ভিডিয়ো পোস্ট করেছে। পুলিশ এই সমস্ত প্রোফাইলের উপরে কড়া নজর রেখেছে বলে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন