ইংরেজির টানে খুদেরা

শুধু বুল্টিদেবী নন, ভর্তির বয়স না হলেও খুদে খুদে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে আসছেন অনেক অভিভাবকই। এমনই ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়ির সেবাগ্রাম আরআর প্রাথমিক স্কুলে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

মেয়ের এখনও স্কুলে ভর্তির বয়স হয়নি। তবুও রোজ কোলে করে তাকে স্কুলে নিয়ে আসেন বুল্টি তিওয়ারি। শনিবারও এসেছিলেন। এ দিন বলেন, ‘‘বড়দের সঙ্গে ক্লাসও করে। কিছু ইংরেজি শিখুক। পরের বছর ভর্তি করতে সুবিধে হবে।” শুধু বুল্টিদেবী নন, ভর্তির বয়স না হলেও খুদে খুদে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে আসছেন অনেক অভিভাবকই। এমনই ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়ির সেবাগ্রাম আরআর প্রাথমিক স্কুলে।

Advertisement

অথচ গতবছরও এমনটা ভাবা যায়নি। আগের বছর এই প্রাথমিক স্কুলে কোনও পড়ুয়া ভর্তিও হয়নি। এই বছর স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু হতেই ছবিটা পাল্টে গিয়েছে বলে দাবি করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শহরের হলেও স্কুল লাগোয়া এলাকায় অনেক প্রান্তিক পরিবারের বাস। কেউ টোটো চালিয়ে সংসার চালান, কেউ বা ছোট্ট দোকান সামলান। বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমে মোটা ফি দিয়ে ছেলে-মেয়েকে ভর্তি করানো তাঁদের কাছে দূরের স্বপ্নের মতো বলে ব্যাখ্যা শিক্ষকদের একাংশের। অথচ সকলেই ছেলেমেয়েদের ইংরেজি শেখাতে চান। তাই যাতে কোনওভাবেই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বিনা বেতনে ইংরেজি পড়ার সুযোগ হাতছাড়া না হয় সে কারণেই আগেভাগে স্কুলে নিয়ে আসা বলে দাবি অভিভাবকদের।

টিনের চাল ছাওয়া একতলা পুরনো স্কুলবাড়ির দেওয়ালে নীল-সাদা রং যে টাটকা তা বেশ বোঝা যায়। শনিবার গিয়ে দেখা গেল সামনে মাঠে শীতের রোদে পিঠে নিয়ে হাত ধরে খেলছে কচিকাঁচার দল। কারও গায়ে স্কুল ইউনিফর্ম, গলায় টাই। কারও আবার বাড়ির পোশাক। যারা বাড়ির পোশাকে, তাদের কারও স্কুলে ভর্তির বয়স হয়নি। কিন্তু অভিভাবকরা জোর করে স্কুলে দিয়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু কর বলেন, “আমরা অভিভাবকদের বুঝিয়েছিলাম, আগামিবারও ভর্তির কোনও সমস্যাই হবে না। তবু ওঁরা বুঝছেন না। স্কুলে এলে তো আর কাউকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। তাই ওরাও খেলাধুলো করে, মাঝেমধ্যে ক্লাসও করে।“ কিন্তু ভর্তি না হলে তো বই-খাতা, ইউনিফর্ম পাওয়া যায় না। এমনকী মিড-ডে মিলও পাওয়া যাবে না বলে স্কুল থেকে অভিভাবকদের জানানো হয়েছিল। এক অভিভাবক বলেন, “না পাবে না পাক। এখন থেকে স্কুলে এলে আগামী বছর ভর্তির খাতায় তো নাম উঠে রইল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন