কিংবদন্তি: ময়নাগুড়ি ফুটবল মাঠের অনুষ্ঠানে আশা ভোঁসলে। শনিবার রােত। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
ঘণ্টাপাঁচেক আগে থেকেই ভিড় জমছিল শহরে। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ খুলে দেওয়া হয় অনুষ্ঠান মঞ্চের প্রবেশপথ। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল প্রতীক্ষার প্রহর। সেই মুহূর্ত যখন এল, তখন েযন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না উপস্থিত বাসিন্দারা।
শনিবার রাত আটটা। ময়নাগুড়ির ফুটবল মাঠ। মঞ্চে উঠলেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আশা ভোঁসলে। যে গলার জাদুতে পাগল গোটা দেশ, সেই গলায় তখন গান গাইছেন আশা ভোঁসলে— তা-ও ময়নাগুড়ির মাটিতে! কতকটা অবিশ্বাস্য ঠেকছিল উপস্থিত জনতার।
অবিশ্বাসের ঘোর কাটার পর থেকেই মুগ্ধতার শুরু। ‘ডন’-এর ‘ইয়ে মেরা দিল প্যার কা দিওয়ানা’ থেকে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’-এর ‘দম মারো দম’— একের পর এক ‘কাল্ট’ হয়ে যাওয়া গান তখন গাইছেন আশাজি। সঙ্গে সুদেশ ভোঁসলে। উপস্থিত দর্শকেরাও যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন সেই গান।
দর্শকদের আচরণ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন উদ্যোক্তারাও। অত্যুৎসাহে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কিছু না করে বসেন, তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। তবে তেমন কিছু হয়নি। উদ্যোক্তাদের মতো স্বস্তিতে শহরের বাসিন্দারাও। অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘এমন একজন শিল্পী আমাদের শহরে এসেছেন, এটা আমাদের ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা যে তাঁকে সেই সম্মান দিতে পেরেছি, আমরা যে সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠান করতে পেরেছি, তাতে আমরা গর্বিত।’’
মঞ্চ থেকে বাসিন্দাদের এই সম্মানের স্বীকৃতি দিয়েছেন আশাও। হিন্দির ফাঁকে ফাঁকে ঝরঝরে বাংলায় তিনি জানিয়েছেন, ময়নাগুড়িতে যে দর্শক-শ্রোতা তিনি পেয়েছেন তাতে তিনি খুব খুশি। ‘পিয়া তু অব তো আজা’ থেকে ‘ঝুমকা গিরা রে’-র মতো বলিউডের কালজয়ী গান যেমন ছিল তাঁর ঝুলিতে তেমনই ছিল উত্তরবঙ্গের নেপালি ভাষাভাষী মানুষের জন্য নেপালি গান।
‘আশা পূরণ’ হওয়ায় প্রিয় শিল্পীকে অভিনব উপায়ে সম্মানও জানিয়েছে শহর। একটা সময় গোটা অনুষ্ঠান এলাকার আলো নিভিয়ে দিয়ে সমস্ত দর্শকেরা মোবাইলের টর্চের আলো জ্বালিয়ে তা হাতে তুলে নাড়াতে থাকেন। মনে হয় অজস্র জোনাকি মাথা নাড়িয়ে সম্মান জানাচ্ছে সঙ্গীত সম্রাজ্ঞীকে। দর্শকদের এমন ভালবাসা পেয়ে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন আশা। তা তিনি জানিয়েছেন বারেবারেই।
বারোটি গানের ডািল সাজিয়ে ছিলেন আশা। তাতেই আশ মেটাতে হয়েছে ময়নাগুড়িকে। তার মধ্যে একটি বাংলা গান ছিল ‘যেতে দাও আমায় ডেকো না’। সেই গান শুনতে শুনতেই যেন ময়নাগু়়ড়ি বলছিল, ‘যেতে নাহি দিব...’।