দশ তলা হাসপাতালে এগারো ঘণ্টা এক ডাক্তার

হাসপাতাল থেকে স্কুল, শিল্প থেকে পরিবেশ, উত্তরবঙ্গে কার কী হাল, তাই নিয়ে এই প্রতিবেদন। আজ নজর স্বাস্থ্যের হালেদশ তলার একটি হাসপাতাল৷ অথচ, রাতের এগারো ঘন্টায় থাকেন মাত্র একজন চিকিৎসক৷ আর তার জেরে মাঝে মধ্যে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

দিন কয়েক আগের ঘটনা৷ রাত তখন প্রায় পৌনে একটা৷ রোগী নিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়াল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে৷ দুই ওয়ার্ড বয় সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে একটি ট্রলিতে রোগীকে তুলে চিকিৎসকের ঘরে নিয়ে গেলেন৷ কিন্তু ঘটনাচক্রে চিকিৎসকের ঘর তখন ফাঁকা৷ রোগীর আত্মীয়রা খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তখন সাত তলায় ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে আচমকা অবস্থা অবনতি হওয়া এক রোগীকে দেখছেন৷ সেই রোগীকে দেখে চিকিৎসক একতলায় জরুরি বিভাগে নেমে এলেন৷ তারপর শুরু হল এই রোগীর চিকিৎসা৷

Advertisement

দশ তলার একটি হাসপাতাল৷ অথচ, রাতের এগারো ঘন্টায় থাকেন মাত্র একজন চিকিৎসক৷ আর তার জেরে মাঝে মধ্যে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ৷ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসকের অভাবের জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু তাতে করে তাঁদেরই মাঝেমধ্যে সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের একাংশের৷

গত বছর জুন মাসে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালটি চালু হয়েছিল৷ হাসপাতালের উদ্বোধন করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তারপর ধাপে ধাপে আউটডোরের বেশ কিছু বিভাগ সেখানে চালু হয়৷

Advertisement

গত নভেম্বর মাসের শুরুতে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের ইন্ডোরের তিনটি বিভাগ ওই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়৷ কিন্তু অভিযোগ, এই ভাবে হাসপাতাল চালু করে দেওয়া হলেও ওই হাসপাতালে বেশিরভাগ চিকিৎসকের পদই এখনও শূন্য অবস্থায় রয়েছে৷ এই অবস্থায় জেলা হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসককে দিয়েই হাসপাতালটি চালান হচ্ছে৷

কিন্তু খোদ চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, জেলা হাসপাতাল থেকে সব বিভাগ এই হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকের সংখ্যা খানিকটা বাড়ত৷ কিন্তু তা না হওয়ায় জরুরি বিভাগে তিনটি শিফটে একজন করে চিকিৎসককে ডিউটি করতে হচ্ছে৷

তবে সমস্যার এখানেই শেষ নয়৷ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার চালু হয়ে গেলেও এখনও আইটিইউ চালু হয়নি৷ ফলে চিকিৎসকদের একাংশে চিন্তা, অস্ত্রোপচারের পর কোন রোগীকে আইটিইউ-তে রাখার প্রয়োজন হলে তারা কী করবেন তা ভেবে৷ আরও অভিযোগ, অ্যানাস্থেসিয়ার সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায় ও তাদের কেউ কেউ নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে সরগর না হওয়ায় জরুরী অস্ত্রপচারও দুপুর তিনটার পর করা যাচ্ছে না৷ পাশাপাশি এতবড় একটি হাসপাতাল চালু হলেও এখনও সেখানে সিটি স্ক্যান চালু হয়নি।

জলপাইগুড়ির সিএমওএইচ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘নতুন একটি ব্যবস্থা চালু হলে কিছু কিছু সমস্যা থাকেই৷ আমরা দ্রুত সেই সমস্যা কাটিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছুই এই হাসপাতালে চালু করব৷ পাশাপাশি অ্যানাস্থেসিয়াদের প্রশিক্ষণ চলছে৷ চিকিৎসকও নিয়োগ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন