বাসিন্দারা উৎসাহী, আগ্রহী রাজ্যও

শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা খরচ করে শালুগাড়ার কাছে সরিয়া পার্ক এলাকায় মুক্ত চিড়িয়াখানার ধাঁচে গড়া হচ্ছে ‘নর্থ বেঙ্গল ওয়াইল্ড অ্যানিম্যাল পার্ক’। গজলডোবায় গড়া হচ্ছে বিশ্ব মানের মেগা ট্যুরিজম হাব।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

গজলডোবায় পর্যটকদের আকর্ষণের রসদ মজুত। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা খরচ করে শালুগাড়ার কাছে সরিয়া পার্ক এলাকায় মুক্ত চিড়িয়াখানার ধাঁচে গড়া হচ্ছে ‘নর্থ বেঙ্গল ওয়াইল্ড অ্যানিম্যাল পার্ক’। গজলডোবায় গড়া হচ্ছে বিশ্ব মানের মেগা ট্যুরিজম হাব। যা গড়ে উঠলে শিলিগুড়ি যেমন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের গন্তব্য হয়ে উঠবে, তেমনই শহরবাসীও সপ্তাহান্তে কাছেপিঠে দিনভর কাটানোর সুয়োগ পাবেন।

Advertisement

দুটি প্রকল্পের ক্ষেত্রেই পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি হতে সময় লাগবে। অথচ উৎসাহী শহরবাসীরা এখনই ওই দুটি প্রকল্প এলাকায় যাতায়াত শুরু করেছেন। সে কথা মাথায় রেখে কেন শহরবাসীদের দিনভর কাটানোর পরিকাঠামো তৈরি করছে না উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর? জবাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘আমরা একটু এগিয়ে ভাবছি। সেটা হল, যদি সপ্তাহান্তে পরীক্ষামূলক ভাবে বেড়ানোর প্যাকেজ চালু করা যায়।’’ প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই মাথা পিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলেই যাতায়াত, দিনভর বিশ্রাম, বেড়ানো, খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হবে। সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তা করার কথা ভাবছে রাজ্য। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘শুধু শিলিগুড়ি শহর নয়, মহকুমার নানা এলাকার বাসিন্দারাও যাতে গজলডোবা, সরিয়া পার্কের এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারেন সেই ব্যবস্থা শীঘ্রই হবে।’’

অবশ্য, সরকারি তরফে নানা সময়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা ঘোষণা নতুন কিছু নয়। কখনও শিলিগুড়ি পুরসভা ঘোষণা করেছে। কখনও শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসজেডিএ) প্রকল্প ঘোষণা করেছে। আবার ৪ বছর আগে গঠিত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর এখন শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দাদের অবসর কাটানো, বিনোদনের পরিকাঠামো গড়ার জন্য উদ্যোগী হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। অতীতে কাজের কাজ সে ভাবে হয়নি। এখন গৌতমবাবু তা কী ভাবে, কবে করতে পারেন তা নিয়ে কৌতুহল রয়েছে শহরের সব মহলেই।

Advertisement

তবে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত সকলেই চাইছেন, অস্থায়ী ভাবে হলেও পুজোর আগেই শিলিগুড়ি-গজলডোবা, শিলিগুড়ি-সরিয়া পার্কের পরিকাঠামো আরও আধুনিক, উন্নত হোক। সেখানে রেস্তোরাঁ ও শৌচাগার যেন পর্যাপ্ত থাকে। যথেচ্ছ নেশার আসর বসানোর প্রবণতা বন্ধ হোক। উপরন্তু, গজলডোবায় বাঁধের ধারে, সরিয়া পার্কের ঝোপের আড়ালে যাতে দৃষ্টিকটু ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা বসানো হোক। কেউ আপত্তিকর ঘটনায় যুক্ত হলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন অনেকেই।

শিলিগুড়ির মহাবীরস্থানের বাসিন্দা পুষ্পা অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমরা ছোটবেলা থেকে শিলিগুড়ির আশেপাশে বেড়াতে যাই। কদিন আগে সরিয়া পার্কে ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে গিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। জঙ্গলের নানা জায়গায় যে দৃশ্য দেখেছি তাতে আঁতকে উঠে চলে এসেছি। গজলডোবায় গিয়েও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। ওই দুটি জায়গায় যোগাযোগের ব্যবস্থা ভাল করা দরকার। আমার তো মনে হয়, সিসি ক্যামেরা বসালে অনেক ধরনের বাঁদরামি বন্ধ হয়ে যাবে।’’

কী ভাবছেন ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন? ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘শিলিগুড়িতে সবুজ নেই বললেই চলে। তাই বাধ্য হয়ে ছুটির দিনে সকলে শপিং মলেই যান। অথচ টয়ট্রেনেকে ঘিরে শিলিগুড়ি জংশনে, সূর্যসেন পার্কে এবং মহানন্দা নদীর পাড় পর্যটনের জন্য উপযুক্ত ছিল।’’ তিনি জানান, হাতের কাছে গজলডোবা থাকলেও, সেখানে ভাল রেস্তোরাঁ থেকে শৌচাগার কোনও পরিকাঠামোই নেই। সম্রাটবাবুর কথায়, ‘‘গজলডোবায় পর্যটন হাব তৈরি হচ্ছে। তবে কিছু মৌলিক পরিষেবা তো আগে তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে।’’ অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুর-এর আহ্বায়ক রাজ বসুও মনে করেন, গজলডোবাকে ঘিরে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন