দেরি হলে মিলল আশ্বাস, স্বস্তির নিঃশ্বাস দিনবাজারে

জলপাইগুড়ির দিনবাজারের পুড়ে যাওয়া বাজারে গিয়ে তা নতুন করে বানিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে দু’বছর সময় চেয়ে নিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি তাঁদের জানালেন, তার মধ্যেই তাঁরা দোকানঘর পেয়ে যাবেন।

Advertisement

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৭:৫৮
Share:

জলপাইগুড়ির দিনবাজারের পুড়ে যাওয়া বাজারে গিয়ে তা নতুন করে বানিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে দু’বছর সময় চেয়ে নিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি তাঁদের জানালেন, তার মধ্যেই তাঁরা দোকানঘর পেয়ে যাবেন। তাঁর ঘোষণায় স্বস্তির ছাপ দেখা গেল ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে। সকলেই ভাবছেন এ বার সত্যিই কিছু হতে চলেছে। এত দিন পুড়ে যাওয়া অংশে দোকানঘর তৈরি নিয়ে বহু টালবাহনা চলেছে। কিছুই স্পষ্ট ভাবে কেউ জানাননি।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এ দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সচিব বরুণ রায়কে সরাসরি প্ল্যান করে খরচের পরিমাণ দাখিল করতে বললেন। তার আগে পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুর উপস্থিতিতে পুরসভার কাছ থেকে জমি হস্তান্তর করে নিতে নির্দেশ দিলেন। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এত দিন যখন কষ্ট করেছেন আর একটু কষ্ট করুন। দু’বছরের মধ্যে সব বানিয়ে দেওয়া হবে।’’

বেলা দেড়টার সময় বরুণবাবুকে নিয়ে মন্ত্রী দিনবাজারের পুড়ে যাওয়া অংশটিতে যান। সেখানে সকাল ৯টা থেকে অপেক্ষা করছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁর জিজ্ঞাসার উত্তরে সচিব তাঁকে জানান, ১১৭ জন দোকানদার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিন তলা বিল্ডিং হলে ভাল। তাতে ১০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। তাঁকে বিল্ডিং-এর একতলায় গাড়ি পার্কিং-এর জায়গা করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। তবে তিনি তা নাকচ করে বলেন, “জায়গাটা ঘিঞ্জি। এখানে পার্কিং-এর জায়গা হওয়া সম্ভব না।”

Advertisement

এর পর তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দশ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ওপর একটি চুক্তি করে নিতে বলেন। তিনি জানান, শুধু দোকান দিলেই হবে না। দোকানদারদের গুদামঘরের বিষয়টিও দেখতে হবে। কারণ এমন অনেক দোকানদার আছেন যাঁদের গুদাম ছিল। পুড়ে যাওয়া অংশটি পুরসভার। তিনি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুর উপস্থিতিতে বরুণবাবুকে পুরসভার কাছ থেকে জমি হস্তান্তর করে নিতে বলেন। মোহন বসু পুরসভার তরফে ‘নো অবজেকশন’ দেওয়ার আশ্বাস দেন। ব্যবসায়ী ওমপ্রকাশ শা ভিড়ের মধ্যে থেকে মন্ত্রীকে বলেন, “স্যার আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। একটু তাড়াতাড়ি বিল্ডিং বানালে ভাল হয়।” মন্ত্রী তাঁকে বলেন, “এত দিন যখন কষ্ট করলেন আর একটু কষ্ট করুন। দু’বছরের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলা হবে।”

২০১৫ সালের ৭ মে-র রাতে এক বিধ্বংসী আগুনে দিনবাজারের টিনশেড পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বেকার হয়ে পড়েন ১১৭ জন ব্যবসায়ী। তারমধ্যে ২৫ জন দশকর্মার ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। সে বারও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে টিনের ঘর তৈরি করে ২৪ জন ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। বাকি ব্যবসায়ীরা কিছুই পাননি। তাদের মধ্যে জামাকাপড়, গালামাল, ছিপ-বঁড়শি, স্টেশনারি, সোনা-রুপোর দোকান আছে।

দিনবাজার কালী মন্দিরের নাটমন্দিরের সমানে জোর করেই বসে পড়েছেন বেশ কিছু ব্যবসায়ী। যে দিন দোকান পুড়ে গিয়েছিল, হাউহাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী বাসু মজুমদার। এ দিন মন্ত্রী ঘুরে যাওয়ার পর তাঁর মুখে হাসি দেখা গেল। তিনি বলেন, “এখন আমি আশাবাদী। মনে হচ্ছে এ বার কিছু হবে।” শুধু ইনিই নন, দিনবাজারের ব্যবসায়ী পিন্টু বসু, দীননাথ শা, শ্যামল সেন সকলেই বলেন, “কষ্ট আমরা করব। তার বদলে আমরা আমাদের পুড়ে যাওয়া দোকানঘর ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছি। এটাই অনেক।”

উত্তরবঙ্গ উন্নময়নমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার সময় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দেবু চৌধুরীর গলা জড়িয়ে বললেন, “আজ আমার অনেক কাজ আছে। তাই ফিরে যাচ্ছি। এর পর এক দিন জলপাইগুড়িতে রাত কাটাব। সে দিন আপনাদের সঙ্গে অনেক কথা হবে। জলপাইগুড়িকে আমি ভালবাসি।”

দিনবাজার ব্যসায়ী সমিতির সম্পাদক দেবু চৌধুরী বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর উদ্যোগে আমরা আশ্বস্ত। আশা করি তাড়াতাড়ি পুড়ে যাওয়া অংশে দোকানগুলির জন্য বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন