উদ্ধার: বেতগুড়ি বাগানে মেলে এই চিতাবাঘটির দেহ। নিজস্ব চিত্র
ডুয়ার্সের বেতগুড়ি চা বাগানে চিতাবাঘের মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বাঁধায় বিশদে তদন্তের নির্দেশ দিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন।
বাগানের শ্রমিকদের একাংশের দাবি, হাতির পালকে বিরক্ত করছিল চিতাবাঘটি। তখন কয়েকটি হাতি মিলে তাকে আছড়ে মারে। ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছে, চিতাবাঘটির পাঁজরের হাড় ভেঙেছে। কিন্তু বন দফতর ও পরিবেশপ্রেমীদের একাংশের পাল্টা দাবি, চিতাবাঘের মতো ক্ষিপ্র জন্তুকে চা বাগানের মধ্যে বাগে পাওয়া হাতির পক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বন দফতর ও পরিবেশপ্রেমীরা চা বাগানের শ্রমিকদের কয়েক জনের কাছ থেকে জেনেছেন, ওই রাতে ঘটনাস্থলের পাশের একটি বাগানে হাতির পাল ঢুকলে মশাল, লাঠি-বল্লম হাতে একদল শ্রমিক তাদের তাড়াতে আসরে নেমেছিল। তখন নালায় লুকিয়ে থাকা চিতাবাঘটি মুখোমুখি পড়ে গেলে সেটিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার বলে বন মহলের অন্দরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। একই দাবি করেন স্থানীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা অমরদান বাক্সলা এবং ডামডিম এলাকার প্রাক্তন প্রধান তথা তৃণমূল কংগ্রেসের ইন্দ্রজিৎ দাসও।
রাজ্যের বন্যপ্রাণ বিভাগের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘ডিএফও পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, হাতিই মেরেছে চিতাবাঘটিকে। তবে অন্য কোনও ব্যাপার থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানিয়েছেন, ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছে কি না, সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।
ঘটনায় উদ্বিগ্ন হাতি বিশেষজ্ঞ পার্বতী বড়ুয়া, পরিবেশপ্রেমী সংস্থার কর্ণধার অনিমেষ বসুরাও। পার্বতী দেবী বলেন, ‘‘হাতি চিতাবাঘকে মেরেছে— সচরাচর এমন ঘটনা শোনা যায় না। তা ছাড়া কেউ তা দেখেছেন কি না, সেটাও জানি না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখলে অনেক কিছু স্পষ্ট হতে পারে।’’
উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ বিভাগের মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষের অবশ্য দাবি, প্রাথমিক তদন্তে তিনি নিশ্চিত, হাতিই পায়ে পিষে মেরেছে চিতাবাঘটিকে। তিনি বলেন, ‘‘এটা অসম্ভবও কিছু নয়। শাবকের নিরাপত্তার জন্য হাতি অনেক কিছুই করতে পারে। চিতাবাঘটির বুকের হাড় যে ভাবে ভেঙেছে, তাতে করে প্রাথমিক ভাবে আমরা নিশ্চিত, হাতিই পা দিয়ে পিষে তাকে মেরেছে৷’’
কিন্তু বন মহলেরই একাংশের বক্তব্য, হাতির পায়ের চাপে চিতাবাঘের দেহ চিঁড়েচ্যাপ্টা হতে যাওয়ার কথা। তা হলে ঘটনাস্থলে রক্তক্ষরণের কোনও চিহ্ন নেই কেন?
মালবাজারের বন্যপ্রাণী স্কোয়াড সূত্রের খবর, গত শনিবার দিনভর মালবাজারের নেপুচাপুর চা বাগানে হাতির দলটি দাঁড়িয়ে ছিল। রাঙামাটি ও ডামডিম লাগোয়া এলাকাতেও হাতি ছিল। রাতে রাঙামাটির দিক থেকে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে বেতগুড়ি লাগোয়া একটি চা বাগানে হাতির দল ঢোকে। স্থানীয় এক শ্রমিক, যিনি সেখানে ধান পাহারার কাজ করছিলেন তিনি টিন পিটিয়ে অন্য ধানচাষিদের হাতি ঢোকার বার্তাও দিয়ে দেন। মশাল, লাঠি, বাঁশ নিয়ে এর পর হাতি তাড়াতে শুরু করেন অনেকে। তাঁদেরই এক জন জানান, বনকর্মীরা থাকলেও তাঁদের কথা না শুনে হাতি তাড়ানো চলে।
ফলে, আদত ঘটনাটা কী, তা তদন্ত করে দেখার প্রয়োজনীতা মানছেন বন দফতরের একটা বড় অংশই।