হঠাৎ কেন টাকার কথা, উঠছে প্রশ্ন

নিয়মিত ফেসবুক করা নিখোঁজ সঙ্গীতার বন্ধুর সংখ্যা মাত্র ৬০!

সোসাল নেটওয়ার্ক সাইট ফেসবুকে বন্ধু বাছাই-এর ক্ষেত্রে একটু খুঁতেখুঁতেই ছিলেন নিখোঁজ সঙ্গীতা কুন্ডু। তদন্ত নেমে পুলিশের সাইবার বিশেষজ্ঞরা এমনটাই জানতে পেরেছেন। সঙ্গীতার পরিবার, সহকর্মীদের কাছ থেকেও জানা গিয়েছে, ফেসবুকে বন্ধু তৈরির ক্ষেত্রে একটু ধীরে সুস্থেই এগোতেন সঙ্গীতা।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১৭
Share:

সঙ্গীতা কুন্ডু। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

সোসাল নেটওয়ার্ক সাইট ফেসবুকে বন্ধু বাছাই-এর ক্ষেত্রে একটু খুঁতেখুঁতেই ছিলেন নিখোঁজ সঙ্গীতা কুন্ডু। তদন্ত নেমে পুলিশের সাইবার বিশেষজ্ঞরা এমনটাই জানতে পেরেছেন।

Advertisement

সঙ্গীতার পরিবার, সহকর্মীদের কাছ থেকেও জানা গিয়েছে, ফেসবুকে বন্ধু তৈরির ক্ষেত্রে একটু ধীরে সুস্থেই এগোতেন সঙ্গীতা। হুটহাট কাউকে যেমন বন্ধু হওয়ার আমন্ত্রণ জানাতেন না। তেমনই, কেউ তেমন আমন্ত্রণ পাঠালেও তা সচরাচর গ্রহণ করতেন না। ২০১৩ সাল থেকে গত জুলাই অবধি সক্রিয়ভাবে একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালালেও, সব মিলিয়ে তাঁর বন্ধু সংখ্যা ৬০ ছাড়ায়নি।

তদন্তকারীরা অফিসারেরা দেখেছেন, পুরানো অ্যাকাউন্টিটে তাঁর বন্ধু সং‌খ্যা ১৬ জন। পরের অ্যাকাউন্ট, মাত্র ৪৪ জন। কিন্তু ঘটনার পর দুই মাস পার হয়ে গেলেও সেই সমস্ত বন্ধুদের কারও সঙ্গেই এখনও পুলিশ যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ। সঙ্গীতার দাদা শম্ভু কুণ্ডু বলেন, ‘‘পুলিশ তো প্রথম থেকেই উদাসীন। ফেসবুক, মোবাইল এ সব আগে থেকে ভাল করে পরীক্ষা করা উচিত ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললে হয়ত, বোনের সম্পর্কে কিছু তথ্য সামনে আসত। তবে সময় এখনও যায়নি।’’

Advertisement

সঙ্গীতার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, একাধিক মোবাইল নম্বরে কথা বলা ছাড়াও নিয়মিত ফেসবুক করতেন সঙ্গীতা। কর্মস্থলের বিশেষ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কতটা ভাল এবং গভীর ছিল, তা ফেসবুকের ছবি, পোস্টের বিভিন্ন কমেন্ট থেকেই বোঝা গিয়েছে। এক জনের ছবিতে সাধারণ কর্মী হিসাবে সঙ্গীতা যে কমেন্ট করেছিলেন, তা খুবই সুসম্পর্ক না থাকলে করা সম্ভব নয়।

সঙ্গীতার কয়েকজন সহকর্মী জানিয়েছেন, কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনেও কথা বলতেন সঙ্গীতা। এমনকি, তাঁরা সোসাল সাইটে চ্যাটও করতেন। কিন্তু তা খুবই বাছাই করা কয়েকজন বন্ধুদের সঙ্গে। এক বন্ধু তাঁকে একটি খুব দামি টেলিফোন উপহার দিয়েছিল বলে অফিসে এসে দেখিয়েছিলেন। তাই পুলিশ তদন্তে নেমে সঙ্গীতার ফেসবুক বন্ধুদের চিহ্নিত করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারত। পুলিশের পক্ষে সোসাল সাইটের মাধ্যমেই তা সম্ভব। তেমনই, ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলি পরীক্ষা করে মেসেজের অংশ খতিয়ে দেখা হলে কিছু জানাও যেতে পারত।

যেমন শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘এই মামলার ক্ষেত্রে পুলিশের দক্ষতা নিয়েই তো প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। ওই তরুণী নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন আগে অবধি ফেসবুক ব্যবহার করতেন বলে শুনছি। তাই খালি মামলা বা জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত নয়, পুলিশকে তথ্য প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে হবে।’’

২০১৩ সালের ফেসবুক ব্যবহার শুরু করেন সঙ্গীতা। সেই সময় তাঁর স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়। তাঁরা আলাদা থাকা শুরু করেন। সঙ্গীতার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখেই তদন্তকারীরা জেনেছেন, নানা পোস্ট, ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি জীবনের সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তার পরে ধীরে ধীরে পরিমল সরকারের সংস্থায় চাকরি পান। সেবক রোডের ফ্ল্যাটে থেকে নাচের স্কুল দেখাশুনো শুরু করেন। তাঁর জীবন কিছু যে ধীরে ধীরে গুছিয়ে উঠছিল, তা ফেসবুকের বন্ধুদের ছবিতে কমেস্ট, লাইক থেকেই পরিস্কার হয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালের শেষ থেকে পোস্টগুলি দেখে ফের জীবনে কোনও সমস্যার শুরু বলে বোঝা যায়। তার পরে ৩১ জুলাই-র পর হঠাৎ করে তিনি ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করেন। ১৭ অগস্ট তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, ফেসবুক নামটাতেই সব রয়েছে। মানুষের মানসিক অবস্থার অনেকেই পোস্ট বা লেখা থেকে বোঝা যায়। অনেকের সোসাল সাইটের চ্যাটের বন্ধুদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথাও বলেন। সঙ্গীতার ক্ষেত্রেও তাই হয়ে থাকতে পারে। ওই বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললে পুলিশের পক্ষে তা জানা সম্ভব।

এই প্রজন্মের অনেকেও জানান, ফেসবুকে যাঁর বন্ধুর সংখ্যা এত কম, তিনি নিশ্চিত ভাবেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক ছিলেন। আবার, বন্ধুর সংখ্যা কম বলেই, যে ক’জন ছিলেন তাঁদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতাও থাকার কথা। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে তিনি জীবনের কথাও ভাগ করে নিতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন