তিন দিন বয়সে চুরি, তিন বছর পরে সেই মেয়েকে ছুঁতে পারলেন মা!

নামকরণ তো দূরের কথা, হাসপাতাল থেকে ফিরতে পারেনি বাড়িতেই। মাত্র তিন দিন বয়সে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল সদ্যোজাত শিশুটি

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৬
Share:

মেয়ে: কন্যাকে অবশেষে কোলে নিলেন মা। নিজস্ব চিত্র

নামকরণ তো দূরের কথা, হাসপাতাল থেকে ফিরতে পারেনি বাড়িতেই। মাত্র তিন দিন বয়সে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল সদ্যোজাত শিশুটি। তিন বছর পরে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থেকে শিশুটি উদ্ধার হলেও আইনের গেরোয় ফিরতে পারেনি পরিবারের কাছে। মালদহের সরকারি হোমে ঠাঁই হয়েছিল একরত্তি মেয়েটির।

Advertisement

অবশেষে উদ্ধারের ছ’দিন পরে বুধবার দুপুরে মেয়েটিকে পরিবারের হাতে তুলে দিল মালদহ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। চুরি যাওয়া মেয়েকে প্রথমবারের জন্য ছুঁতে পেরে আনন্দে চোখের জল চেপে রাখতে পারলেন না পুরাতন মালদহের ধুমাদিঘি গ্রামের বাসিন্দা মন্টু বেসরা ও তাঁর স্ত্রী সোনামণি কিস্কু। আর নিজের মানুষদের কাছে পেয়েও অচেনা মুখ গুলি দেখে কান্না জুড়ে দিল শিশুটিও। কেক, চকলেট, চুড়ি দিয়েও মেয়ের কান্না থামালেন সোনামণিদেবী।

এ দিন সকাল আটটা নাগাদ মালদহ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি থেকে ফোন পান মন্টুবাবু। ভাবুক গ্রামপঞ্চায়েতের ধুমাদিঘি গ্রাম থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির অফিসে সকাল দশটাতেই সপরিবারে হাজির হয়ে যান তিনি। চকোলেট, কেক এবং মেয়ের জন্য কাচের চুড়িও নিয়ে যান তাঁরা। দুপুর দু’টো নাগাদ শিশুটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সোনামণিদেবী জানান, জন্মের পরে ওজন কম থাকায় তাঁর মেয়েকে অন্য ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। কোলে নেওয়া তো দূরের কথা, মেয়েকে চোখের দেখাও দেখতে পায়নি। তিনি বলেন, ‘‘তিন দিন পরে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার সময় কর্তৃপক্ষ মেয়েকে আমার কোলে দিতে পারেননি। তিন বছর পর মেয়েকে ছুঁয়ে দেখলাম।”

Advertisement

মন্টুবাবুও বলেন, “রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। কাজ করে হাতে কিছু টাকা হতেই মেয়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়তাম। আশা কখনও ছাড়ে নি। মেয়েকে কোলে নিয়ে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ পেয়ে গেলাম।” একই সঙ্গে আক্ষেপও করেছেন তিনি। তিনি বলেন, “হাসপাতাল থেকে মেয়ে চুরি হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য তিন বছর ধরে মেয়ের থেকে দূরে ছিলাম। এমনকী, আমাদের মেয়ে চিনতেও পারছে না। তবে রক্তের সম্পর্ককে নিশ্চয়ই চিনতে পারবে মেয়ে।” এ দিন বাড়ি ফিরে গিয়ে মেয়ের নামকরণ করবেন বলে জানিয়েছেন ওই দম্পতী। তাঁরা বলেন, “জামা কাপড়, জুতো সবই কিনতে হবে।”

ঘটনায় শেফালি রবিদাস এবং জাহানা বিবি নামে এক আয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান চেতালী ঘোষ সরকার বলেন, “মেয়েটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন