বাজারে: আজ ইদ। তার আগে কেনাকেটা বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত
ক’দিন আগেই মহম্মদ শাহরুখ মা-কে লিখেছিলেন ‘মা তুমি চিন্তা করবে না। ইদের আগে বাড়ি ফিরে ইদের কেনাকেটা করব।’’ বন্যা বাধ সেধেছে। বাড়ি ফেরার উপায় এখন নেই। তাই ইদের কেনাকেটা হল না। আজ বুধবার ইদের আনন্দের মধ্যেই তাই মা মুজেদা খাতুন হতাশ।
কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে গিয়ে ভয়াবহ বন্যায় আটকে পড়েছেন গোয়ালপোখরের বিপ্রিত গ্রামের ২০ বছরের যুবক শাহরুখ। তার প্রতিবেশী মাজিদ এক সঙ্গেই রয়েছে। দু’জন এক সঙ্গে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন বাড়ি ফিরবেন বলে। মাজিদের বাবা ইশাহাক অপেক্ষায় রয়েছেন, ছেলের সাথে গিয়ে ইদগাহ ময়দানে নমাজ পড়বেন। কিন্তু উৎসবের মধ্যে ভাঁটা পড়ছে ইশাহাকদের পরিবারে। তিনি বললেন, ‘‘ইদগাহ ময়দানে প্রার্থনা করবেন কেরলের এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসুক।’’
গোয়ালপোখর এবং চাকুলিয়ার এই রকম এখনও পর্যন্ত ২০০ পরিবার স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী গোলাম রব্বানির কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন। দাবি, শাহরুখ মাজিদের সুস্থ ভাবে ফিরিয়ে আনা। একই ভাবে আটকে পড়েছেন চাকুলিয়ার তারাপুর গ্রামের সোলেমান আকবর আলিরা। এই গ্রাম থেকে ৫০ জন শ্রমিক কেরালায় আটকে। সোলেমানের বাবা আনজার আলম জানালেন, তিন দিন আগে ফোনে শেষ কথা হয়েছিল। শুধুই এইটুকু বলেছিল, সবাই ভাল আছে।
সোলেমানরা কেরলে পাড়ি দিয়েছিলেন নির্মাণ শ্রমিকের কাজে। প্রতিটা ইদে সোলেমানরা বাড়ি ফেরেন। ইদের কেনাকেটা করে দেন। কিন্ত গোটা গ্রামে যেন ইদের আনন্দটা মাটি হয়ে গেছে। সোলেমান ইদে বাড়ি ফিরবেন স্ত্রী সাবিনা ও তাঁর পাঁচ বছরের রাবেয়াকে নিয়ে আনন্দে ছিলেন। নতুন শাড়ি পাবেন। এবং মেয়ে নতুন জামা পাবে। যখন শুনলেন সোলেমান আসছেন না। মন ভারাক্রান্ত।
ওই গ্রামের আর এক প্রতিবেশী আকবর আলির বাবা আতাউর রহমান বললেন, ‘‘ছেলে বছরে দুটো ইদে বাড়ি ফেরে। গত ইদে এসেছিল। এ বার আসার জন্য ট্রেনের জন্য টিকিট কেটেছিল। কিন্ত বন্যার জন্য ফেরা হল না।’’
চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক দলের বিধায়ক আলি ইমরান রমজ বলেন, ‘‘এই বিষয়ে রায়গঞ্জ সাংসদ মহাম্মদ সেলিম নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।’’ তিনি দাবি করেন এই এলাকার আটকে যাওয়া মানুষদের ফেরানোর বিষয়ে প্রশাসনের উদ্যোগী হওয়া উচিত।
তৃণমুল কংগ্রেস ব্লক সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, ‘‘গোয়ালপোখর এবং চাকুলিয়া এলাকার প্রচুর পরিবার যোগাযোগ করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি।’’