‘আমি পড়তেই চাই, কিন্তু বেচে দেবে মা’

‘‘বাড়ি ফিরলেই বিক্রি করে দেবে মা। আমাকে বাঁচান। আমি পড়াশোনা করতে চাই ‘ম্যাডাম’।’’

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫১
Share:

প্রতীকী ছবি।

নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতে স্কুলে এসেছিল মেয়েটি। পরীক্ষাও দিয়েছিল। এতটুকু অস্বাভাবিকতা নজরে আসেনি কারও। তারপরেই বিপত্তি। ছুটির পর বেরিয়ে নিজের মা কে দেখতে পেয়েই সে আতঙ্কে আবার স্কুলে ঢুকে পড়ে। মা-ও নাছোড়। তাকে নিয়েই বাড়ি ফিরবে। এই টানাপড়েনের সময়েই শিক্ষিকাদের কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীটি।

Advertisement

‘‘বাড়ি ফিরলেই বিক্রি করে দেবে মা। আমাকে বাঁচান। আমি পড়াশোনা করতে চাই ‘ম্যাডাম’।’’ ছাত্রীর মুখে এমনই আর্তি শুনে হতবাক হয়ে যান স্কুলের শিক্ষিকারা। শেষ পর্যন্ত তাঁদের তৎপরতাতেই পুলিশ এসে গ্রেফতার করে মাকে।

ওই ছাত্রী বলে, “মা ফোনে কাউকে জানাচ্ছিল আমাকে বিক্রি করে দেবে। খারাপ কাজ করানোর জন্য মা আমাকে চাপ দিত। আমি আর মায়ের সঙ্গে থাকতে চাই না। আমি পড়াশোনা করতে চাই।” যদিও ধৃত মহিলার দাবি, ‘‘মেয়ে রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। তাই তাকে নেওয়ার জন্য স্কুলে গিয়েছিলাম।’’

Advertisement

বুধবার দুপুরের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় মালদহের ইংরেজবাজার শহরের ওই স্কুলে। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “ছুটির পর আচমকাই কাঁদতে শুরু করে ও। ওর অভিযোগ শুনে আর দেরি না করে পুলিশকে জানাই। মেয়েটির সাহসকে কুর্নিশ জানাতে চাই।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ইংরেজবাজার শহরেই ভাড়া বাড়িতে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন ওই মহিলা। তার স্বামী ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। অভিযোগ, মেয়েকে বিক্রির করে দেওয়ার ছক কষেছিলেন ওই মহিলা। জানতে পেরে মঙ্গলবার বাড়ি থেকে পালিয়ে দিদার বাড়িতে চলে যায় ওই ছাত্রী। সেখান থেকেই এ দিন সকালে স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসে। কিন্তু ছুটির পর বেরিয়ে মাকে দেখেই ভয় পেয়ে যায় সে। মেয়েটির অভিযোগের কথা জানাজানি হতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ওই মহিলাকে আটক করে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করে শিশু সুরক্ষা কমিটির হাতে তুলে দেয়।

আরও পড়ুন: রাহুলের ধর্মও অস্ত্র বিজেপির

পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার কথায় অসঙ্গতি রয়েছে। অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে তার যোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনের কল লিস্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ, বৃহস্পতিবার মালদহ জেলা আদালতে পেশ করা হবে তাকে। শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান চৈতালী ঘোষ সরকার বলেন, “আমাদের হোমে থেকেই মেয়েটি পরীক্ষা দেবে। আমরা তার কাউন্সেলিং করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন