ছিটমহল এ বার রুপোলি পর্দায়

তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। খান সেনাদের অত্যাচারে দেশ ছাড়ছেন অনেকে। কেউ জীবন বাঁচাতে সব ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। সেই অত্যাচারের মুখে পড়ে এক কিশোর হারিয়ে ফেলেছে তার মাকে। মায়ের খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে সে চলে এসেছে ছিটমহলে। তাঁর চোখেই দেখা শুরু হবে ‘ছিটমহল’।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০১
Share:

ছিটমহলবাসীদের সঙ্গে হরনাথ চক্রবর্তী। — ফাইল চিত্র

তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। খান সেনাদের অত্যাচারে দেশ ছাড়ছেন অনেকে। কেউ জীবন বাঁচাতে সব ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। সেই অত্যাচারের মুখে পড়ে এক কিশোর হারিয়ে ফেলেছে তার মাকে। মায়ের খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে সে চলে এসেছে ছিটমহলে। তাঁর চোখেই দেখা শুরু হবে ‘ছিটমহল’।

Advertisement

এমনই প্রেক্ষাপটে বড় পর্দায় এ বার ফুটে উঠবে ছিটমহল। দিন কয়েক আগে টলিউডের পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী দিনহাটার বাংলাদেশের সাবেক ছিটমহল মশালডাঙা ঘুরে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা শ্যামল দত্ত। হরনাথবাবু জানান, সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মশালডাঙায় সিনেমার শ্যুটিং শুরু হবে। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ছিটমহল সমস্যা পুরোটাই সিনেমায় থাকবে। সে ব্যাপারে আমাদের প্রাথমিক কাজ শেষ।”

সিনেমার ওই খবরে ছিটমহল জুড়ে উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। এখন শ্যুটিং শুরু হওয়ার অপেক্ষাতেই দিন গুণছেন তাঁরা। মধ্য মশালডাঙার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন, সাদ্দাম হোসেনরা জানান, তাঁদের সঙ্গে হরনাথবাবুদের দেখা হয়েছে। কথাও হয়েছে। জয়নাল বলেন, “কত কষ্ট, কত সমস্যার মধ্যে দিয়ে আমাদের দিন কেটেছে, তা আমরাই জানি। সেই সব দিনের কথা সিনেমার মাধ্যমে উঠে আসবে জেনে খুব ভাল লাগছে। আমরাই চাই মানুষ জানুক সব কথা।” সাদ্দামের কথায়, “শ্যুটিং শুরু হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুণছি। আসলে যে দিন ওঁরা এসেছিলেন, সে দিন থেকে সেই পুরনো দিনের কথার মধ্যে ডুবে আছি।”

Advertisement

ছিটমহলে সমস্যার শেষ ছিল না। সেখানে কোনও আইন ছিল না। ছিল না স্কুল, কলেজ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র। একটা সময় বাজারে জিনিসপত্র বিক্রি করতে গিয়েও বাংলাদেশি হিসেবে গ্রেফতার হওয়ার ভয় ছিল তাঁদের। তাই ফড়েদের ডেকে নিয়ে গিয়ে কম দামে সেই কৃষিজপণ্য তুলে দিতে হত। ধীরে ধীরে নিজদের পরিচয় গোপন করে ভারতীয় কোনও বাসিন্দাকে বাবা-মা বলে পরিচয় দিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তাঁরা। হাসপাতালের সুবিধে নেন। সেই সব সমস্ত কথাই উঠে আসবে সিনেমায়। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে প্রেম, বিরহ, ভালবাসার দৃশ্য থাকবে। হরনাথবাবু জানান, ক্লাইম্যাক্সে থাকবে ছিটমহল হস্তান্তর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চুক্তি স্বাক্ষরও থাকবে। বাদ যাবে না মুখ্যমন্ত্রীর কোচবিহারে সফরে এসে ছিটমহল হস্তান্তরের কথা ঘোষণার। সব মিলিয়ে সেই সিনেমার অপেক্ষাতে এখন থেকেই দিন গুণতে শুরু করেছেন ছিটমহল তথা কোচবিহারের বাসিন্দারা। ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “এটা একটি ঐতিহাসিক সত্য। নানা ভাবে তা উঠে আসছে। এর আগে তথ্যচিত্র হয়েছে। এ বারে বড় পর্দায়। খুব ভাল উদ্যোগ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন