বছর পনেরোর রেজাউল শেখ। বাড়ি মিলকিতে। ছোট থেকেই দুই পা অসাড়। হাঁটাচলা করতে না পারায় বাড়িতে শুয়েই দিন কাটে তার। শারীরিক এই পরিস্থিতিতে হয়নি লেখাপড়াও। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হলেও রেজাউলকে নিয়ে বিড়ম্বনায় তাঁর দিনমজুর বাবা আকমল শেখ। ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য পঞ্চায়েত-প্রশাসন ঘুরে জুতোর শুকতলা খুইয়ে দিলেও এত বছরেও সার্টিফিকেট বা শংসাপত্র মেলেনি অভিযোগ। রেজাউলের মতো অনেকেই শংসাপত্র পাননি, স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিবন্ধী ভাতা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, এমন ১০ বছর বয়সের উপরে সকলকে রাজ্য সরকার এ বার এক হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মানবিক’। জেলায় জেলায় উপভোক্তা চিহ্নিত করে মানবিক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরুও হয়েছে। অভিযোগ, মালদহ জেলায় সরকারি ভাবে সে রকম প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ শিবির না হয়নি, ফলে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শংসাপত্র না থাকায় ভাতা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ইংরেজবাজার ব্লকেও সেই সংখ্যা অনেক। এ বার এই মানবিক প্রকল্প নিয়ে মানবিক উদ্যোগ নিল ইংরেজবাজার ব্লক প্রশাসন।
কিন্তু কী সেই পদক্ষেপ? ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, এই প্রকল্পে ব্লকের কত মানুষ সুবিধা পেতে পারেন সে জন্য প্রতিবন্ধকতা যুক্ত মানুষ খুঁজে বের করার কাজ শুরু হয় প্রথমে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে বুথ লেভেল অফিসারদের রেজিস্টারের তালিকা নেওয়া হয়। সেখানে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে কত মানুষ শারীরিক বাধা আছে, তার নথি রয়েছে। এ ছাড়া ব্লকের সমস্ত হাই স্কুল, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলি থেকেও তালিকা জোগাড় করা হয়। পঞ্চায়েত দফতরের নিজস্ব তালিকা ও সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্প দফতর থেকেও তালিকা নেওয়া হয় বলে খবর। এরপর সমস্ত তালিকা পাঠানো হয় ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতে।
পঞ্চায়েত কর্মীরা যাচাই করেন যে, সেই তালিকার মধ্যে কত জনের শংসাপত্র রয়েছে, কত জনের নেই এবং কত জন আগে থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তাতে দেখা যায় যে ব্লকে প্রায় সাড়ে ছ’শোর মতো প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের শংসাপত্র নেই। এরপর তাঁদের সনাক্ত করে শংসাপত্র দিতে ব্লকে মোট তিনটি শিবিরের আয়োজন করা হয়। একটি শিবির হয় ইংরেজবাজার বিডিও অফিসে, একটি অমৃতি পঞ্চায়েত দফতর ও অপরটি নরহাট্টা পঞ্চায়েত দফতরে। নির্দিষ্ট করা পঞ্চায়েতের প্রতিবন্ধকতাযুক্ত বাসিন্দারা সেই শিবিরে হাজির হন।
শিবিরে ডিস্ট্রিক্ট ডিজ়েবিলিটি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের তরফে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক এনে ৫০ শতাংশের বেশি প্রতিবন্ধকতাযুক্তদের চিহ্নিতকরণের কাজ হয়। ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এ বার তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হবে এবং তা পেলেই মানবিক প্রকল্পে তাঁরা উপভোক্তা হতে আবেদন করতে পারবেন।
ইংরেজবাজারের বিডিও দেবর্ষি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শংসাপত্র না থাকায় অনেকেই মানবিক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছিলেন না। তাই আমরা ব্লক প্রশাসনের তরফে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে মানবিক প্রকল্পে প্রকৃত প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষেরা যাতে ভাতা পান, তার চেষ্টা করেছি।’’
ইংরেজবাজার যে মডেলে উদ্যোগ নিয়ে মানবিক প্রকল্পের জন্য মানবিক মুখ দেখিয়েছে, সেই মডেল জেলার অন্যান্য ব্লকেও কার্যকর করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক।