বিসর্জনের পরে মহরমে

পুজোর চাঁদা তোলা, বাজার, ডেকোরেটরকে তাগাদা পুজোর এমন নানা কাজের জন্য আপাতত চাকরির খোঁজ-তদ্বির বন্ধ রেখেছেন। সন্ধেয় চাঁদা তোলার জন্য লাঠিখেলার মহড়াতেও যাচ্ছে না। তবে তাজিয়া নিয়ে বের হওয়ার দিন অবশ্যই যাবে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০৫
Share:

সাজ: বাকি আর কয়েকদিন। সেজে উঠছেন মৃন্ময়ী। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

আশ্বিনের আকাশে ভাদ্রের মতো চড়া রোদ। বাঁশের মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়েই রয়েছে তারিক! মণ্ডপের মাথায় তোলা হচ্ছে শোলার কাজ। পড়ে গিয়ে ভেঙে না যায়! সেই তদারকিই করছে চাকরি খুঁজে চলা তারিক।

Advertisement

পুজোর চাঁদা তোলা, বাজার, ডেকোরেটরকে তাগাদা পুজোর এমন নানা কাজের জন্য আপাতত চাকরির খোঁজ-তদ্বির বন্ধ রেখেছেন। সন্ধেয় চাঁদা তোলার জন্য লাঠিখেলার মহড়াতেও যাচ্ছে না। তবে তাজিয়া নিয়ে বের হওয়ার দিন অবশ্যই যাবে। তারিকের কথায়, ‘‘বিকেলে আমাদের পুজোর ভাসান হবে। সন্ধের পর বের হবে তাজিয়া। কাজেই দু’টোতেই থাকা যাবে, কোনও সমস্যা নেই।’’

শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন দুর্গাপুজো কমিটির মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তারিক। রেল কলোনির যে গুটিকয়েক বাসিন্দারা এখনও পুজোয় যুক্ত, তারিক তাঁদের অন্যতম। শিলিগুড়ি শহরের প্রথম ‘সর্বজনীন পুজো’ এ বছর শততম বর্ষে। নানা ভাষা-ভাষী, ধর্মের সম্প্রতি বহন করে চলেছে এই পুজো।

Advertisement

ইংরেজ শাসকরা যে বছর ভারতে ‘ব্রিটিশ পলিসি’ প্রবর্তন করলেন, সে বছরই পুজোর শুরু। রেলের গুডস বিভাগের বড়বাবু আরও কর্মীদের জুটিয়ে পুজো শুরু করেছিলেন। সে সময় রেলের ব্রিটিশ সাহেব-রা পুজোয় আসতেন। তখন রমরমিয়ে পুজো হতো। ভিনধর্মী সাহেবদের পুজোয় যোগ দেওয়া নিয়ে কোনও ছুঁতমার্গ সে সময় ছিল না পুজোয়। জুতো খুলে ঠাকুরদালানে সাহেবরা উঠেছেন এমন গল্প প্রবীণদের থেকে শুনেছেন চিন্ময় ঘোষ-প্রবীর কুমার পালেরা।

স্বাধীনতার পরে কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যের বাসিন্দারা আসেন রেল কলোনিতে। হিন্দি-ভোজপুরী ভাষাভাষির বাসিন্দারাও পুজোতে সামিল হতো। পুজো কমিটির সম্পাদক চিন্ময়বাবু বললেন, ‘‘হিন্দিভাষিরা আগেও আমাদের পুজোয় পাত পেড়ে খেয়েছেন। এ বছরও অঞ্জলি দেবেন।’’

তবে শতবর্ষে মন ভাল নেই পুজো উদ্যোক্তাদের। একসময়ে রেল থেকে সাহায্য করত, পুজোর জৌলুসও ছিল। সে সব এখন অতীত। জনা কয়েক বাসিন্দা চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন চালাচ্ছেন। প্রবীরবাবুর কথায়, ‘‘লোকবল কমে গিয়েছে। চাঁদা ওঠে না। একশো বছর বলে এ বার নিজেরাই বেশি করে চাঁদা দিয়ে সব জোগাড় করেছি। আসছে বছর থেকে পুজো হবে না।’’

এক সময়ে টয় ট্রেনে চেপে বিসর্জন হতো। বাষট্টিতে চিন ভারত যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী রেল কলোনিতেই ডেরা বসিয়েছিল। সে বছর সেনাবাহিনীর ট্রাকে দেবী প্রতিমা মহানন্দায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনই নানা কাহিনি জড়িয়ে টাউন স্টেশনের পুজোর সঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব-অবিশ্বাস ছায়া ফেলেনি এই পুজোয়। টাউন স্টেশনের পুজো তাই তারিকদের কাছেও ‘আমাদের পুজো।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন