ক্ষোভ: পিন্টু দাসকে খুনের প্রতিবাদে থানা ঘেরাও স্থানীয় বাসিন্দাদের। ছবি: নারায়ণ দে
আলিপুরদুয়ার খোকন চৌধুরী খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ৷ শুক্রবার গভীর রাতে আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ ওই দু’জনকে ধরে৷ তবে খোকনের দেহ মেলার পর তিন দিন কেটে গেলেও মাথাটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ৷ এ দিকে শুক্রবার কালচিনি থেকে উদ্ধার হওয়া মাথাটি কার দেহের তাও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে৷ এই জোড়া মাথার রহস্যই আপাতত পুলিশের মাথাব্যথা।
শনিবার রাতে অবশ্য পুলিশেরই একটি সূত্র দাবি করে, খোকন চৌধুরী খুন-কাণ্ডের কিনারা হয়ে গিয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, শুক্রবার কালচিনিতে উদ্ধার হওয়া মাথাটিও খোকনেরই৷ ডিএনএ পরীক্ষা হলেই তা প্রমাণিত হবে বলে দাবি ওই সূত্রের। যদিও খোকনের পরিজনেরা দেহ দেখে জানিয়েছিলেন মাথাটি খোকনের নয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, একটি খুনের চেষ্টার মামলায় সাক্ষী ছিলেন খোকন৷ ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত-সহ তিনজন গত মঙ্গলবার রাতে পাটকাপাড়াতে নিয়ে গিয়ে খোকনকে খুন করে তার মাথাটি কেটে নেয়৷ ধস্তাধস্তিতে তারাও সামান্য জখম হয়৷ তারপর কালচিনির নিমতি চৌপথির কাছে মাথাটি ফেলে দিয়ে লতাবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসাও করায় তারা৷ এরপর নিমতির একটি ধাবায় খাওয়া-দাওয়া করে আলিপুরদুয়ারে ফেরে তারা৷ পুলিশের ওই সূত্রটির দাবি, এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দু’জন ওই তিনজনের দলেরই সদস্য৷ তবে মূল অভিযুক্তকে এখনও ধরা যায়নি৷
পাকড়াও: খোকন চৌধুরী খুনে ধৃত দুই। নিজস্ব চিত্র
আলিপুরদুয়ারে পরপর এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। শহরেরই প্রমোদনগরের বাসিন্দা পিন্টু দাসকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন আলিপুরদুয়ার পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা৷ শনিবার শহরে মৌনী মিছিলের পাশাপাশি থানা ঘেরাও করেন তাঁরা৷ টানা এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রমোদ নগরের বাসিন্দা পিন্টু দাসের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷
ওই রাতেই পিন্টুর বাড়ি থেকে তিনশো মিটার দূরে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেরই সঞ্জয় কলোনি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান খোকন চৌধুরী৷ তার একদিন পর আবার পাটকাপাড়া চা বাগান এলাকা থেকে একটি মাথাহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷ পরে সেই দেহ খোকনের বলে তাঁর বাড়ির লোকেরা শনাক্ত করেন৷
শুক্রবার রাতে খোকন খুনে যুক্ত থাকার অভিযোগে রাজেন গোঁসাই ও চন্দন রায় নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ এর মধ্যে রাজেনের বাড়ি পাটকাপাড়ায়৷ চন্দন থাকে আলিপুরদুয়ার শহরের অরবিন্দ নগরে৷ দু’জনের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে৷ দু’জনকে এ দিন দশ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে পুলিশ৷ তবে আদালত চত্বরে ধৃত দু’জনেই দাবি করেছেন, ঘটনার দিন রাতে তাঁরা নিজেদের নিজেদের বাড়িতে ছিলেন৷ এই খুনের ঘটনার কিছুই তাঁদের জানা নেই বলেও দাবি তাঁদের৷
শনিবার আলিপুরদুয়ার জেলার মর্গে উদ্ধার হওয়া কাটা মাথাটির ময়নাতদন্ত হয়৷ হাসপাতালের এক কর্তা জানিয়েছেন, কাটা মাথার নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতায় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে৷ সেখান থেকে রিপোর্ট এলেই বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা সম্ভব হবে৷
মাত্র চারদিনে কখনও দেহ, কখনও মাথাহীন দেহ, আবার কখনও দেহহীন মাথা উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামতেই কালজানি নদীর বাঁধের ধারে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা শুরু হলেও, পুলিশ তা রুখতে কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ শহরবাসীর৷ খুন হওয়া শহরের দুই যুবক পিন্টু ও খোকনের বাড়িও ওই নদীর ধারেই৷ পিন্টুকে খুনের অভিযোগেও ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ ওই ঘটনায় ধৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার শহরে মৌন মিছিলের সঙ্গে আলিপুরদুয়ার থানা ঘেরাও করেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ৷ থানার কর্তাদের একটি স্মারকলিপিও জমা দেন তাঁরা৷ ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর অমূল্য মণ্ডল বলেন, “পিন্টু দাস খুনের মামলায় আদালতে দ্রুত চার্জশিট দিতে আমরা পুলিশকে বলেছি৷ সমাজবিরোধীদের কার্যকলাপ রুখতে বাঁধের ধারে টহলদারি চালানো হবে বলে পুলিশ কর্তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন৷”