সাহেবি ঘড়ির সঙ্গী হবে নয়া ঘড়িমিনার

এক সময়ে শহরের যে কোনও প্রান্ত থেকেই দেখা যেত সাহেবি ঘড়িটাকে। দার্জিলিং পুরভবনে উঁচু স্তম্ভে লাগানো ঘড়িটার বয়স বাড়ছে। অনেক বসন্ত পেরিয়ে এখন সে ছিয়ানব্বই। বহু বছর ধরে আশেপাশে একের পর এক বহুতল তৈরি হয়েছে শৈলশহরে। ঘড়ির মুখ ঢেকেছে সেই সব বহুতল। এখন শহরের সব প্রান্ত থেকে আগের মতো মিনারে বসানো ঘড়িটা দেখা যায় না।

Advertisement

রেজা প্রধান

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:২৮
Share:

দার্জিলিঙের ক্লক টাওয়ার। ছবি: রবিন রাই।

এক সময়ে শহরের যে কোনও প্রান্ত থেকেই দেখা যেত সাহেবি ঘড়িটাকে। দার্জিলিং পুরভবনে উঁচু স্তম্ভে লাগানো ঘড়িটার বয়স বাড়ছে। অনেক বসন্ত পেরিয়ে এখন সে ছিয়ানব্বই। বহু বছর ধরে আশেপাশে একের পর এক বহুতল তৈরি হয়েছে শৈলশহরে। ঘড়ির মুখ ঢেকেছে সেই সব বহুতল। এখন শহরের সব প্রান্ত থেকে আগের মতো মিনারে বসানো ঘড়িটা দেখা যায় না। সেই আক্ষেপ মেটাতে এ বার পুরোনোর আদলে শৈলশহরে বসতে চলেছে আরও একটি ঘড়ি।

Advertisement

একটি বেসরকারি সংস্থার তরফে টাওয়ারের আদলে ভবন তৈরি করে ঘড়ি বসানো হবে। চকবাজারে মিনার তৈরি করে বসানো হবে ঘড়িটি। নির্মাণকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আকারে অবশ্য নতুন ঘড়িটি কিছুটা ছোট হবে। দার্জিলিঙের চৌরাস্তায় তৈরি হবে টাওয়ার আকৃতির ভবন, তার ওপরে বসানো হবে ঘড়ি। লম্বাকৃতি ভবনে একটি জলাধার থাকবে। শিশু-কিশোরদের জন্য গ্রন্থাগার তৈরির ভাবনাও রয়েছে। পুরসভার তরফে চৌরাস্তায় ওই সংস্থাকে ২৫ বছরের লিজে প্রায় আড়াইশো বর্গমিটার জমি দেওয়া হয়েছে। সেই জমিতেই মিনার ভবন এবং ঘড়ি বসাতে ব্যয় হবে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, অনুদান এবং বরাদ্দ থেকে এই ব্যয় জোগাড় করা হবে।

গত রবিবার চকবাজারে ঘড়ি ভবন তৈরির ভূমিপুজো হয়েছে। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। পুরোনো ঘড়ির স্মারক রেখে দেওয়াই নতুন তৈরির উদ্দেশ্য। ঘড়ি বসানোর সঙ্গে ভবনটিকে আরও কিছু কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছে। সেই পরিকল্পনা জানালেন সংস্থার চেয়ারম্যান তাসি পেনচো। তিনি বলেন, ‘‘ভবনে জলাধার থাকবে। দমকল কেন্দ্র দার্জিলিং শহর থেকে কিছুটা দূরে। আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছতে কিছুটা সময় লেগে যায়। নতুন ভবন তৈরি হলে সেখানে জলাধার থাকবে। শহরের কোথাও আগুন লাগলে ঘড়ি ভবন থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর পরিকাঠামোও থাকবে।’’ তাসি বলেন, ‘‘নতুন ঘড়িটি তুলনামূলক ছোট হলেও সেটি অবিকল পুরোনোর মতোই দেখতে হবে। ভবনটিও এমন ভাবে তৈরি হবে যাতে দেখে মনে হয় পুরনো ঘড়িভবনটিকেই কেউ যেন তুলে চকবাজারে নিয়ে এসেছে।’’

Advertisement

১৮৫০ সালে দার্জিলিং পুরসভা গঠন হয়। নানা এলাকায় ঠিকানা বদলে ১৯২০ সালে লাদেনলা রোডে স্থায়ী পুরভবন তৈরি হয়। ব্রিটিশ স্থাপত্যে ভবনের একদিন মিনারের মতো তৈরি করে বসানো হয় ঘড়ি। তখন থেকেই পর্যটকদের আকর্ষন এই ঘড়ি মিনার। ইংরেজ আমল থেকেই ক্যাপিটাল টাওয়ার নামে ঘড়ি মিনারের পরিচিতি। ঘড়ি মিনারকে ফ্রেমে রেখে বাসিন্দা এবং পর্যচকদের ছবি তোলার চেষ্টা এখনও বদলায়নি। তবে ছবি তোলার কায়দা বদলছে, মোবাইল কিছুটা নীচ থেকে ধরে রেখে ক্যাপিটাল টাওয়ারের সঙ্গে নিজস্বী তুলতে দেখা যায় দেশ-বিদেশের পর্যটকদের।

সময়ের সঙ্গে ঝড়-ঝাপটাও সামলেছে ঘড়িটি। নব্বইয়ের দশকে ঘড়ি মিনারে আগুন লেগে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘড়িটি। দীর্ঘদিন ঘড়িটির কাঁটা থেমে থাকার পরে ২০০৬ সালে মেরামতির পরে ফের চলতে থাকে ঘড়িটি। তারপর থেকে অবশ্য কাঁটা থামেনি, প্রতি ঘণ্টায় ক্যাপিটাল টাওয়ারের ঘড়ি থেকে শৈলশহরে ছড়িয়ে যায় ‘ঢং-ঢং’ শব্দ। নতুন ঘড়ি অবশ্য নিঃশব্দেই সময় জানাবে। তাই দার্জিলিংকে সময় শোনানোর ভার থাকছে শত বছর ছুঁতে চলা সাহেবি ঘড়ির উপরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন