এমন বাজারের ব্যাগেই পড়ে ছিল ওই সদ্যোজাত। — বিশ্বরূপ বসাক
সদ্যোজাত শিশু উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে শিলিগুড়িতে। বুধবার ভোরে শিলিগুড়ির হায়দারপাড়ার বুদ্ধ মন্দির রোড থেকে বাজারের ব্যাগে ভরা একটি শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিলিগুড়ি হাসপাতালের এসএনসিইউ ইউনিটে শিশুটির চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, তার শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। তবে শিশুটিকে কে বা কারা ফেলে গেল, কোনও নার্সিংহোম থেকে শিশুটিকে চুরি করা হয়েছে কি না, সে সব প্রশ্নের উত্তর এখনও পুলিশের কাছে নেই। শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি সংমিত লেপচা বলেন, ‘‘আমরা সব রকম সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি। বিভিন্ন নার্সিংহোমে খবর নেওয়া হচ্ছে। লাগোয়া এলাকার থানাগুলিতে কোনও শিশু চুরির অভিযোগ জমা পড়েছে কি না, তা-ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’
একটি কালীমন্দিরের পাশে রাখা পাথরের স্তূপের উপর থেকে ব্যাগে ভরা শিশুপুত্রটির প্রথম খোঁজ পান স্থানীয় বাসিন্দা রামকুমারীদেবী। ভোরবেলায় দরজার কাছ থেকে একটি শিশুর কান্না শুনতে পান তিনি। বাইরে এসে পাথরের উপরে একটি বাজারের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে উঁকি দেন। রামকুমারীদেবী বলেন, ‘‘ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটেছে। উঁকি দিয়েই চমকে উঠি। ব্যাগের ভিতর কাপড় পেঁচানো অবস্থায় একটি শিশু। শুধু মুখটা বাইরে রয়েছে। নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে শিশুটি।’’ আশেপাশের বাসিন্দাদের ডেকে তোলেন তিনি। খবর দেওয়া হয় পুলিশেও।
শিশু উদ্ধারের ঘটনায় নানা আশঙ্কা করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। এ দিন জলপাইগুড়ি শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যরা শিলিগুড়ি হাসপাতালে গিয়ে শিশুকে দেখে এসেছেন। সমিতির তরফে মান্নান মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি। কে বা কারা শিশুটিকে ফেলে দিয়ে গেল, তা দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের একাংশের দাবি, শিশু উদ্ধারের পিছনেও কোনও চক্রের কাজ থাকতে পারে। শিলিগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে শিশু চুরি এবং শিশু বিক্রি রুখতে নিয়ে অভিযান চলছে। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ির ঘটনার নেপথ্যেও কোনও চক্র থাকতেই পারে। পুলিশ সক্রিয় না হলে, তা জানা সম্ভব হবে না।’’
সম্প্রতি কলকাতায় শিশু বিক্রির সিন্ডিকেট ধরা পড়ার পরে, তদন্তে উঠে এসেছে একাধিক জেলার নাম। সিআইডি-র দল সব জেলাতেই বিভিন্ন নার্সিংহোম, দত্তক দেওয়ার হোমগুলিতে খোঁজখবর শুরু করেছে। মালদহ, ইসলামপুরে বেশ কিছু নার্সিংহোমে অভিযান চালিয়ে সিল করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির অভিযোগ, অনুমোদনহীন নার্সিংহোম থেকে ইতিমধ্যেই বিক্রির জন্য রাখা শিশু সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।