জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, ঝালদা, কালিয়াগঞ্জ, রাজ্য ঢুঁড়লে তালিকায় উঠে আসবে একের পর এক নাম। দল ভাঙিয়ে অনাস্থা পেশ করে মানুষের রায়কে নস্যাৎ করার এই ধারা রুখতে এ বার অনাস্থাকেই হাতিয়ার করল রাজ্যের বিরোধী জোট। মালদহের চাঁচল-১ ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এই গ্রাম পঞ্চায়েতে শাসকদলের কোনও সদস্য নেই। কিন্তু সিপিএম ও কংগ্রেস সদস্যদের প্রলোভনের পাশাপাশি মিথ্যে মামলার ভয় দেখিয়ে তৃণমূল তাদের দলে টানার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যকে টানতে পারলেই সিপিএম প্রধানকে অনাস্থায় অপসারিত করে পঞ্চায়েত দখল। এই পরিস্থিতি এড়াতে বুধবার ক্ষমতাসীন সিপিএম বোর্ড ও বিরোধী কংগ্রেসের ৯ সদস্য বিডিওর কাছে জোট বেঁধে আগেভাগেই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পেশ করল।
শাসকদলকে রোখার পাশাপাশি নিজেদের ঘর সামলাতেই অনাস্থাকে হাতিয়ার করা হয়েছে বলে সিপিএম ও কংগ্রেস উভয় পক্ষেই দাবি করা হয়েছে। অনাস্থা পেশ করার পরেই পঞ্চায়েতের সিপিএম ও কংগ্রেসের বাকি ১৫ সদস্যকেও পাঠানো হয়েছে গোপন শিবিরে।
চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সুব্রত বর্মন বলেন, ‘‘এবার তলবি সভা ডেকে প্রধানকে আস্থা প্রমাণ করতে হবে।’’
কিন্তু দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আগেই কেন অনাস্থা পেশ করলেন তাঁর পক্ষে থাকা উভয় শিবিরের সদস্যরা?
প্রশাসন ও প়ঞ্চায়েত সূত্রের খবর, আইন অনুযায়ী একবার পঞ্চায়েতে অনাস্থার সভা হলে আগামী আড়াই বছর আর অনাস্থার সভা ডাকা যাবে না। তৃণমূলকে আটকাতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে।
১৯ আসনের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএমের ১২ ও কংগ্রেসের ৭টি আসন ছিল। প্রধান সিপিএমের জাহানারা বিবি। গত বিধানসভা নির্বাচনে চাঁচল কেন্দ্রে জোট হয়েছিল। তখন থেকেই সিপিএম ও বিরোধী কংগ্রেস সদস্যরা কার্যত জোট বেঁধে পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন।
কিন্তু সম্প্রতি শাসকদল পঞ্চায়েতের দখল নিতে মরিয়া হয়ে দল ভাঙানোর খেলা শুরু করেছে বলে অভিযোগ। এরমধ্যে চার সিপিএম সদস্য ও কংগ্রেসের এক সদস্য দল ছেড়ে নির্দল হন। এদের মধ্যে চার সিপিএম সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূল উভয় শিবিরের সদস্যদের মোটা টাকা ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দল ভাঙানো শুরু করেছে বলে অভিযোগ। তাতে রাজি না হলে সদস্যদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হবে, এমন হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
সিপিএমের চাঁচল লোকাল কমিটির সম্পাদক অমল মণ্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূল অনৈতিকভাবে মোটা টাকা ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অন্যদের ঘর ভাঙছে। কিন্তু আমাদের তো দলটাকে বাঁচাতে হবে। তাই ভেবেচিন্তেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেওয়া হয়েছে।’’
চাঁচল-১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ইন্দ্রনারায়ণ মজুমদারও বলেন, ‘‘শুনেছি পাঁচ লক্ষ টাকা ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সদস্যদের ভাঙানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য বলেছেন, ‘‘অনৈতিকভাবে আমরা কারও ঘর ভাঙতে যাইনি। অনেকেই স্বেচ্ছায় তৃণমূলে আসতে চাইছেন। বরং ওরাই নানাভাবে ওদের ভয় দেখিয়ে আটকাতে চাইছেন।’’