শ্মশানে এমন কেউ নেই যিনি উর্দু পড়তে পারেন। মৃত্যুর সরকারি নথি কিন্তু লেখা রয়েছে উর্দুতে। সেই নথির মর্মোদ্ধার না করায় সৎকার করা সম্ভব নয়, জানিয়ে দেয় শ্মশান কর্তৃপক্ষ।
তা শুনে শ্মশানের মাটিতেই বসে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক। পাশে শায়িত তাঁর স্ত্রীর দেহ। একে স্ত্রী বিয়োগের শোক, তার ওপরে দেহ সৎকার নিয়ে বিড়ম্বনা। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ওই সরকারি কর্তা। তাঁর পরিজনেরা নানা মহলে যোগাযোগ করেন। অবশেষে উর্দুতে লেখা সেই নথি পাঠানো হয় স্থানীয় একটি কারবালায়। উর্দু পড়ার পরে পুর কর্তৃপক্ষে জানানো হলে, তাঁরা দাহ করার অনুমতি দেন। গত শুক্রবার রাতে শিলিগুড়ির ঘটনা।
বন্ধের দিন সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির কিরণচন্দ্র শ্মশানে পৌঁছয় মঞ্জু বিশ্বাসের দেহ। সপরিবারে তিনি বৈষ্ণোদেবী গিয়েছিলেন। গত ১ সেপ্টেম্বর ভোরে জম্মুর কাটরাতে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেখান থেকে জম্মু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মঞ্জুদেবীর দেহ। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে চিকিৎসক জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। সে কথা ম্যাজিস্ট্রেট লিখে মৃত্যুর সংশাপত্র তৈরি করে দেন। সেটি লেখা হয় উর্দুতে। সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই।
গত শুক্রবার বিমানে মঞ্জুদেবীর দেহ নিয়ে আসা হয় শিলিগুড়িতে। বিকেলে দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কিরণচন্দ্র শ্মশানে। সেখানে থাকা পুরসভার কর্মীরা, উর্দু নথির কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। শ্মশানে বা আশেপাশের এলাকার এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি যে উর্দু পড়তে পারেন। দেহ সৎকার করার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
নানা মাধ্যমে খবর পৌঁছয় শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের কাছে। তিনি বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। এরপরেই পুরসভার কর্মীরা যোগাযোগ করে কারবালা থেকে এক উর্দুভাষীকে শ্মশানে নিয়ে আসেন। তিনি নথি পড়ার জন্য নিয়ে যান। সূত্রের খবর, কারবালায় উর্দু শিক্ষিতরা নথি পাঠ করে পুর কর্তৃপক্ষকে জানালে তবে সৎকারের অনুমতি মেলে।
শিলিগুড়ি শহরের মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শ্মশানের কর্মীরা উর্দু লেখা বুঝতে পারেননি। কারবালা থেকে অভিজ্ঞদের পাঠিয়ে উর্দু নথি যাচাই করা হয়েছে।’’ মেয়রের কথায়, ‘‘খবর পাওয়া মাত্রা পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়ছিলাম। মৃতার পরিবারের যাতে কোনও দুর্ভোগ না হয়, তা দেখতে বলি।’’ মেয়রের নির্দেশে শ্মশানে গিয়েছিলেন ডেপুটি মেয়রও। মৃতার স্বামীও বলেন, ‘‘পুরকর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। ওঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই।’’