রঙের কাজ চলছে মদনমোহন মন্দিরে। —নিজস্ব চিত্র।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনেও বেতন হল না কোচবিহারের দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মীদের। তাতে কোচবিহার মদনমোহন মন্দির সহ বোর্ডের আওতাধীন ২২টি মন্দিরের শতাধিক কর্মী বিপাকে পড়েছেন। রীতিমতো ক্ষোভও ছড়িয়েছে কর্মীদের একাংশের মধ্যে। তারপরেও অবশ্য কবে তাঁদের বেতন হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না।
গোটা ঘটনায় আশঙ্কিত প্রশাসনের কর্তারা। বোর্ড সূত্রেই জানা গিয়েছে, দ্রুত বকেয়া মেটানো না হলে সমস্যা তৈরি হতে পারে আশঙ্কা করে ইতিমধ্যে রাজ্য পর্যটন দফতরে চিঠি দিয়েছেন কোচবিহারের জেলাশাসক। পদাধিকার বলে যিনি ওই ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি। কোচবিহারের জেলাশাসক তথা বোর্ডের সভাপতি পি উল্গানাথন বলেন, “বকেয়া বেতন মেটাতে বরাদ্দ চেয়ে পর্যটন দফতরে চিঠি পাঠিয়েছি। তাতে বিস্তারিত তথ্য ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি একজন অতিরিক্ত জেলাশাসক ওই ব্যাপারে পর্যটন দফতরের পদস্থ কর্তার সঙ্গে দেখা করেছেন। আশা করছি দ্রুত ওই ব্যাপারে বরাদ্দ পেয়ে যাব।”
দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রের খবর, কোচবিহারের রাজাদের আমলে মদনমোহন মন্দির সহ বিভিন্ন মন্দির তৈরি হয়। তালিকায় বেনারস ও বৃন্দাবনে তৈরি মন্দিরও রয়েছে। সে সব এক ছাতার নীচে এনে দেখ ভাল করার দায়িত্বে রয়েছে দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড। ওই মন্দির দেখভালে ৫৮ জন স্থায়ী ও ৯৬ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। রাজ্য পর্যটন দফতরের বরাদ্দে ফি মাসে ওই কর্মীদের বেতন মেটানো হয়। গড়ে প্রতি মাসে দরকার হয় ১৭
লক্ষ টাকা।
পর্যটন দফতর থেকে নিয়মিত বরাদ্দ না মেলায় ডিসেম্বর থেকে বেতন নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ডিসেম্বরের বেতন পান কর্মীরা। ফেব্রুয়ারিতে মাস ফুরোলেও অবশ্য বেতন মেলেনি। দেবোত্তর কর্মচারি সমিতির সভাপতি হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “কর্মীরা সকলেই রীতিমতো সমস্যায় রয়েছেন। সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে বহুবার দরবার করা হয়েছে। সমস্ত পুজো বজায় রেখে ধারাবাহিক ভাবে লাগাতর পালা করে অবস্থানের আন্দোলনের কথা ভাবতে হচ্ছে।”
এমন পরিস্থিতির জেরেই জেলার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ বলে পরিচিত মদনমোহন মন্দির সহ বিভিন্ন মন্দিরের সাফাই, বাগান পরিচর্যা, সৌন্দর্যায়নের মতো নানা কাজ করা নিয়ে সমস্যার আশঙ্কা করছেন বোর্ড কর্তারা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, দেবোত্তরের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও মদনমোহন মন্দির সহ বিভিন্ন মন্দির ঘিরে বাসিন্দাদের আবেগ, রাজ আমল থেকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর হয়ে কী ভাবে পর্যটন দফতরের হাতে বেতনের দায়িত্ব গেল সে সব কিছুও জেলাশাসক চিঠিতে বিশদে জানান। এমনকি নিয়মিত অডিট হয় সেকথা উল্লেখ করে ‘সমস্যা’ এড়াতে দ্রুত বকেয়া বরাদ্দের আর্জি জানিয়েছেন।