শুকিয়ে যাচ্ছে চা পাতা। — দীপঙ্কর ঘটক
একটা গোটা মাস শেষের পথে। বৃষ্টির দেখা নেই। তার জেরেই সঙ্কটে ডুয়ার্সের চা-বলয়।
প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছিল গত ২৯ মার্চ। ওই দিন এক ইঞ্চির (চা বাগানের পরিমাপ) কিছু বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছিল। তার এক বারের জন্যেও এক বেলাও তেমন বৃষ্টি আর হয়নি। এপ্রিল মাস শেষ হতে চললেও মাসটাই রুখাশুখাই রয়ে গিয়েছে। বৈশাখের দাবদাহে প্রবল সঙ্কটের মুখে পড়েছে ডুয়ার্সের চা বলয়।
প্রতি বছর, মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে মৌসুমী বায়ু রাজ্যে ঢোকার আগেই বেশকিছু ভারী বৃষ্টিপাত ডুয়ার্সে হয়ে যায়। কড়া রোদ থাকলেও তার ফাঁকে ফাঁকেই কয়েক পশলা ভারী বৃষ্টি চা বাগানে নতুন সবুজ পাতা গজাতে যেমন সাহায্য করে, তেমনই রোগপোকার হাত থেকেও চা গাছকে বাঁচায়। কিন্তু এ বারের অনাবৃষ্টির জেরে থ্রিপস (একপ্রকার মশাজাতীয় পতঙ্গ), রেড স্পাইডার বা লাল মাকড়ের মত পোকার আবির্ভাব হয়ে গিয়েছে। চা গাছের রস শুষে নিয়ে পাতা কুঁকড়ে দেয় এই পোকারা। সেই সঙ্গে প্রবল দাবদাহ চলতে থাকায় চা গাছ থেকে প্রচুর জলও বেরিয়ে যাচ্ছে ফলে নতুন পাতা মেলার সম্ভাবনাও কমে আসছে।
ডুয়ার্সের চা বাগান মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৫-র জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যে বৃষ্টিপাত হয়েছিল তার থেকে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ৪৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার ডুয়ার্স শাখার সচিব রামঅবতার শর্মা জানালেন, ৩৩ ডিগ্রীর থেকেও বেশি তাপমাত্রা উঠছে। কিন্তু সেটা বড় সমস্যা নয়। মাঝেমধ্যে ভারী বৃষ্টি হলেই এই তাপমাত্রায় কোনও সমস্যাই হবে না। কিন্তু টানা বৃষ্টির দেখা না মেলাতে চা গাছ থেকে পাতা আসতেও সমস্যা হচ্ছে। উল্লেখ্য মার্চ এপ্রিলে সব চা বাগানেই দ্বিতীয় দফায় সবুজ পাতা আসতে শুরু করে। চায়ের পরিভাষায় তাকে ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ বলা হয়। এই সেকেন্ড ফ্লাশের গুণমান যথেষ্ট ভাল এবং বাজারমূল্যও যথেষ্ট।
কিন্তু বৃষ্টির দেখা না মেলায় এই ‘সেকেন্ড ফ্লাশ’ নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়ে গেছে। তবে অসমের চা বাগানে এবার ডুয়ার্সের উল্টোচিত্র। অসমে খুব ভাল বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে চা বাগান মালিকদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহের সঞ্চার হয়েছে বলেই খবর। ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের ইনডং চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার রজত দেব বললেন, ‘‘অসমের কাছে থেকেও আমাদের এখানে বৃষ্টির দেখাই নেই। গাছের রস শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচের পাইপ দিয়ে চা গাছে জল ছিটিয়েও কিছু লাভ হচ্ছে না। আর এভাবে সেচ দেওয়া এতই বেশি খরচ সাপেক্ষ যে গোটা বাগানে তা সম্ভবও নয়।’’ চা মালিকপক্ষের অন্যতম একটি সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী মনে করছেন, আগামী পাঁচ-ছ’দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। অমিতাংশুবাবু বলেন, ‘‘দ্রুত বৃষ্টি আসুক আমরা এটাই এখন চাইছি। গত বছর এ রকম সমস্যা হয়নি।’’
এক পশলা ভারী বৃষ্টি হলেও সমস্যার খানিকটা সুরাহা হয়ে যাবে বলেই মনে করছে চা শিল্প মহল। এখন সেই এক পশলার আশাতেই চা বলয়।