জেই-তে ফের মৃত দুই

মেডিক্যালে ফিভার ক্লিনিক দাবি

রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সকালের মধ্যে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত এক মহিলা-সহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার বাসিন্দা একাদশী সরকার (৮০)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০২:১৩
Share:

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সকালের মধ্যে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত এক মহিলা-সহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার বাসিন্দা একাদশী সরকার (৮০)। রবিবার বিকেলের পর তিনি মারা যান। অপর জন জলপাইগুড়ির মালবাজারের বাসিন্দা ভগবান দাস মোহালি (২৮)। এ দিন ভোরে তিনি মারা যান। ৮ জুলাই তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল। দু জনের শরীরেই জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে।

Advertisement

জলপাইগুড়ি হাসপাতালে খিঁচুনি জ্বর নিয়ে ভর্তি এক রোগীর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ময়নাগুড়ি পেটকাটি গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবকের নাম রঞ্জিত যাদব (২০)। সেপ্টিসেমিয়া রোগে তিনি মারা গিয়েছেন বলে ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই রোগীর মৃত্যুর কারণ জানাতে চাননি। তা গোপন রাখতে তৎপর হন। সে কারেই সন্দেহ দানা বাঁধে, তিনি সত্যি সেপ্টিসেমিয়ায় মারা গিয়েছেন না কি অ্যকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে মারা গিয়েছেন? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা অবশ্য বলেন, “সেপ্টিসেমিয়াতেই রঞ্জিত যাদব মারা গিয়েছেন।”

খিঁচুনি জ্বর নিয়ে বর্তমানে অন্তত ২২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। তার মধ্যে রবিবার রাত থেকে এ দিন পর্যন্ত অন্তত ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাঁর মধ্যে অজিত মোদক নামে এক রোগীকে কোচবিহারের মাথাভাঙা থেকে ভর্তি করানো হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। কম বেশি একই রকম পরিস্থিতি কিসানগঞ্জ থেকে ভর্তি হওয়া মহম্মদ লতিবের। দুই জনকেই অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এ দিন তাদের রক্ত পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত খিঁচুনি জ্বর নিয়ে উত্তরবঙ্গ মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৩ জনের মৃত্যু হল। তার মধ্যে ৯ জন জেই। জুলাই মাসে গত ১৩ দিনে ১০ জনের মৃত্যু হল। ৬ জনই জেই-আক্রান্ত।

Advertisement


জলপাইগুড়ি হাসপাতাল চত্বরে অবাধেই ঘুরছে শুয়োর। সোমবার রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

এ দিন মাথাভাঙার আদম কামাল নামে ১৩ বছরের এক কিশোরকে ছুটি দেয় চিকিৎসকেরা। তাঁর শরীরে জেই-র জীবাণু মিলেছে। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হতেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কেন তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদমের পরিবারের লোকেরা। গত ১০ দিন ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। আদমের দাদাু রহমান মিঁয়া বলেন, ‘‘এখানে চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ হল না, বাড়িতে নিয়ে গেলে কী চিকিৎসা হবে বুঝতে পারছি না। চিকিৎসকেরা পুরোপুরি সুস্থ করে তবেই ছুটি দিতে পারতেন।’’

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিনই রোগী আসছেন। গড়ে প্রতিদিন ৪০ জন রোগী আসছেন। অথচ আলাদা ফিভার ক্লিনিক খোলা হয়নি বলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ দিন জ্বর নিয়ে বহির্বিভাগে দেখাতে এসেছিলেন ফাঁসিদেওয়ার সোহাগী বিশ্বাস, ফুলবাড়ির মহম্মদ রমিজুল, রামধর, রিয়া ঘোষদের মতো বাসিন্দারা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হওয়ায় তাঁরাও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অথচ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার নির্মল বেরা বলেন, ‘‘এখনও সে ভাবে রোগী আসছে না বলেই খোলা হয়নি। তা ছাড়া বহির্বিভাগে জেনারেল মেডিসিন এবং মেডিসিন দুটি আলাদা বিভাগে রোগীদের দেখা হচ্ছে। ভিড় হওয়ার কথা নয়। তবে প্রয়োজন হলে ফিভার ক্লিনিক খোলার ব্যবস্থা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন