বন্যা পরিস্থিতির জেরে রেলের পাশাপাশি বিপর্যস্ত সড়ক যোগাযোগ। তাই গোটা উত্তর জুড়েই দুর্ভোগ পিছু নিয়েছে দুর্গতদের।
এ দিন এনজেপি-হলদিবাড়ির মধ্যে একটি মাত্র প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং এনজেপি-নিউ বঙ্গাইগাঁও-এর মধ্যে একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল করেছে। রাজধানী, শতাব্দী, কামরূপ, সরাইঘাট, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা, পদাতিক বা দার্জিলিং মেলের মত সমস্ত ট্রেন বাতিল হয়েছে। সকাল থেকে এনজেপি স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় ছিল নজরকাড়া। বিহারের কিসানগঞ্জের বাসিন্দা মহম্মদ সোহর, বহরমপুরের বাসিন্দা বিমল বর্মনের মত যাত্রীরা বলেন, ‘‘ব্যবসার কাজে এসে ফেঁসে গিয়েছি। গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি না। হোটেলে থাকার খরচও বাড়ছে। বাসও চলছে না।’’
সকাল থেকে শহরের তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কোচবিহার, জলপাইগুড়ির দিকে কিছু বাস গেলেও রায়গঞ্জ হয়ে কলকাতার দিকে কোনও গাড়ি যায়নি।
মালদহ টাউন স্টেশন সহ বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে গিয়েও দেখা যায় যাত্রীদের দুর্ভোগের ছবি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনে আটকে অসুস্থ হয়ে এক রেল যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। সোমবার সকালে মালদহ টাউন স্টেশনের শৌচাগার থেকে অসুস্থ ওই যাত্রীর দেহ উদ্ধারের পর শোরগোল পড়ে যায় যাত্রী মহলে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সাইফুল ইসলাম (২৪) অসমের বরপেটা মেসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ।
শনিবার মধ্যরাত থেকেই মালদহ টাউন স্টেশন থেকে আপ এবং ডাউন সমস্ত ট্রেন চলাচল বাতিল হয়ে যায়। ঘুরিয়ে দেওয়া হয় কলকাতাগামী এক্সপ্রেস, প্যাসেঞ্জার ট্রেন গুলি। ফলে বিপাকে পড়েন রেল যাত্রীরা। শুধু রেল যোগাযোগই নয়, বন্ধ হয়ে গিয়েছে সড়ক যোগাযোগও। রবিবার রাত থেকে মালদহ টাউন স্টেশনেই রয়েছেন পাঁচ শতাধিক রেল যাত্রী। ঘুরপথে বাসে যাওয়ার জন্য ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে ওঠার হিড়িক।
শনিবার রাত ৩টা ৪০ মিনিটে রামপুরহাট স্টেশনের পরে দাঁড়িয়ে যায় বিবেক এক্সপ্রেস। রবিবার সন্ধে ছ’টা নাগাদ মালদহের উদ্দেশ্যে ট্রেনটি রওনা হয়। অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ধরে ট্রেনটি নির্জন এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকার ফলে জল, খাবার না পেয়ে পেটে যন্ত্রণা শুরু হয় সাইফুলের। সহ-যাত্রীরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ওষুধ এনে দেন। ওইদিন রাত ন’টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় মালদহ টাউন স্টেশনে। অসম যাওয়ার কোনও ট্রেন না পেয়ে টিকিট কাউন্টার চত্বরেই আশ্রয় নেন তিনি। এ দিন সকালে টিকিট কাউন্টার সংলগ্ন শৌচাগারের সামনে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। বিমানের টিকিট মিললেও তা প্রতিদিনই বাড়ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।